করোনা পরীক্ষায় প্রস্তুত চার বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। চলতি সপ্তাহেই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা শুরু হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশের পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কিত একটি নোটিশ জারি করেছে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান বকাউলের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে করোনাভাইরাস রোগ শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিবকে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মনে করেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যাচাই করে এই গবেষণাগারগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু করা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে।

এ বিষয়ে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, বেশ আগেই তাঁরা তাঁদের সক্ষমতা সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন। তাঁরা প্রস্তুত আছেন।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি সপ্তাহেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে নমুনা শনাক্ত করার কাজ শুরু করতে পারবেন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ হবে। এ মুহূর্তে তাঁদের সুরক্ষা পোশাক, কিট ও নমুনা প্রয়োজন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জেলার সিভিল সার্জন প্রত্যেকেই এ কাজে যুক্ত থাকবেন। দিনে এক শ থেকে দুশোটি পর্যন্ত পরীক্ষা করা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মনে করছে, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মেসি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষণাগার কোভিড-১৯ শনাক্তের কাজে লাগানো যাবে। তা ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিট তৈরিতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হতে আগ্রহী।

আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯ রেসপন্স টিম গঠন করেছে। এই টিমকে সমর্থন দিতে একটি টেকনিক্যাল টিম প্রস্তুত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শরীফ আখতারুজ্জামান এই টিমের প্রধান।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, তাঁরা প্রস্তুত আছেন । পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রিয়েল টাইম পিসিআর মেশিন প্রয়োজন হয়, সেই মেশিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগে রয়েছে। বিভাগ দুটি হলো, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ। দিনে এখানে কমপক্ষে ১০০টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ জন দক্ষ শিক্ষক কাজ করতে প্রস্তুত আছেন। গবেষণাগারগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপযোগী করে তুলতে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। সুরক্ষার জন্য যেটুকু বা যা প্রয়োজন তা বিশ্ববিদ্যালয় করে নিতে পারবে।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গবেষণাগারে দিনে ২০০টির মতো নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। তাঁদের গবেষণাগারটি অত্যাধুনিক এবং বেশ আগেই তাঁরা কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের একটি দল রয়েছে। তাঁরাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি করবে।
প্রথমে শুধু রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯ শনাক্তের কাজ হলেও, এখন তা ১৭ টি জায়গায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারপরও যত মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন তার অর্ধেকেরও চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে।