এই দুর্যোগে দম্ভ, অহংকার ও প্রতিহিংসা চায় না বিরোধী দলগুলো

রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষা পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে।  ছবি: মঈনুল ইসলাম
রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষা পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে। ছবি: মঈনুল ইসলাম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলাকে জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। এ কাজে পুরো জাতিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এই দুর্যোগে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে ঐক্যমত্য তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে সর্বদলীয় পরামর্শসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ কথা বলেন।

আজকের সভায় জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে তা মোকাবিলা করতে সমন্বিত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে বিরোধী দলগুলো।

সভার সূচনা বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ করোনাভাইরাস সংক্রমণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে তা মোকাবিলার জন্য সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সব রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তাঁরা বলে আসছেন।

বাম জোটের এই সর্বদলীয় পরামর্শক সভায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। তবে বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।

গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমি সমর্থন করি। জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে। এককভাবে এটা সম্ভব নয়। সম্মিলিতভাবে করতে হলে মতবিনিয়ম করা, ঐকমত্য গঠন করা এবং সারা জাতিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’

কোনো সংকীর্ণ চিন্তা না করে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সবাইকে সম্মিলিতভাবে সব শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তা অপ্রতুল এবং দলীয়করণ করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর রহমতে এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।’

সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই মহাদুর্যোগ একার পক্ষে নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এটা করতে হবে। আমি এখনো আহ্বান জানাব সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকারি যন্ত্র, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রসহ সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার জন্য।’

জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠনের আহ্বান জানান জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তিনি সরকারসহ সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানান।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় এই পরামর্শ সভায় ভিডিও কনফারেন্সে আরও যুক্ত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ডা. ফয়জুল হাকিম, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ সবুর, বাম ঐক্যজোটের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির প্রমুখ। এ ছাড়া সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির আবদুল্লাহ আল কাফী, রুহিন হোসেন।