দোষ খোঁজা বাদ দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বিদেশি লবিস্টদের পেছনে অর্থব্যয় আর ঘরে বসে দোষ খোঁজা বাদ দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন থেকে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।

হাছান মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের এক-তৃতীয়াংশের মানুষকে যখন সরকার সহায়তা দিচ্ছে, তখন বিএনপি ঘরে বসে এ সকল কাজের দোষ খোঁজায় ব্যস্ত। চিরাচরিত এই অভ্যাস থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি।

এ সময় আক্ষেপ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের সিনিয়র নেতারা ক’দিন ধরে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু তারা (বিএনপি) জনগণের পাশে কোথায়! শহরে-গ্রামে কোথাও তাদের নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে নেই। তারা শুধু ঢাকা শহরে কয়েকটা লোক দেখানো ফটোসেশনে ব্যস্ত আর সেই ফটোসেশন করতে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা ছাড়া আর কিছু নেই।

ত্রাণে অনিয়মের বিচার তৎক্ষণাৎ মোবাইল কোর্টে করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, হাতে গোণা ত্রাণে অনিয়মের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে বিএনপি যে কথা বলছে, তাতে তাদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখতে বলব। তিনি বলেন, তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে পরপর পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিল। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা ঠেকাতে বিদেশি লবিস্টদের পেছনে লাখ লাখ ডলার খরচ করেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন-জেলা- উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায় পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭২ হাজারের মতো স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি রয়েছে। এরমধ্যে ৪৫টি মামলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার ১ জন চেয়ারম্যান ও ২ জন মেম্বারকে বরখাস্ত করেছে, যা আনুপাতিক হারে ২ হাজারের মধ্যে একটি ঘটনা, যদিও একটি ঘটনাও কাম্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এধরণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আগে মোবাইল কোর্টে বিচার হবে, পরে নিয়মিত মামলা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি কভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীর করোনায় আক্রান্তের খবরের প্রতিক্রিয়ায় হাছান মাহমুদ উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেখানে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের জনসমাগম অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে, সেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তিকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জমায়েত করে বিএনপি যে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তার দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর বাইরেও যারা খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের জন্য এ করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার মেট্রিক টন চাল, ২৫ কোটি টাকা নগদ ও শিশুখাদ্যের জন্য পৃথক ২ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, জানান তথ্যমন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ বলেন, এছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৫০ লাখ পরিবার অর্থাৎ আড়াই কোটি মানুষ বছরে ৭ মাস খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে, যা বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। একইসঙ্গে ওএমএসের চালের দাম ৩০ টাকা থেকে ১০ টাকায় নামিয়ে এনে সারাদেশে ৬৮৯টি কেন্দ্রে মার্চ ও এপ্রিলে ৩৫ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করছে সরকার। হাওরের কৃষকদের জন্য আলাদাভাবে ১০ টাকা কেজির ওএমএস চালু করেছে সরকার।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেসকল পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে চলতি অর্থ বছরে ১৭ লাখ বিধবার জন্য বছরব্যাপী ১ হাজার ২০ কোটি টাকা, ৪৪ লাখ বয়স্ক মানুষের জন্য ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা বয়স্কভাতা, দুঃস্থ ১৬ লাখ মানুষের জন্য ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, ভিজিডি-তে ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা, ভিজিএফ হিসেবে ২০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল দেয়া হচ্ছে, তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১৪৪ উদ্যোগে ও করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, ব্যক্তি উদ্যোগ, জেলা প্রশাসনসহ সরকারি দল, পুলিশের দেশব্যাপী নানান উদ্যোগে দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ সরকারের সহায়তার আওতায় রয়েছে।