আজ একাই সেজে বসে আছে প্রকৃতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের গাছগুলো সবুজে সেজেছে। ১৪ এপ্রিল সকালে। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের গাছগুলো সবুজে সেজেছে। ১৪ এপ্রিল সকালে। ছবি: প্রথম আলো

এবারের বৈশাখ যেন দেবদারু পাতাগুলোতে নতুন করে রঙ লাগিয়েছে। পাতারা তাই আরও উজ্জ্বল, আরও সবুজ, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, কিন্তু এ প্রকৃতি যেন একাই সেজে বসে আছে। তার পাশে খোঁপায় ফুল গুঁজে রঙিন শাড়ি অথবা ফুল তোলা পাঞ্জাবি পরে আর কেউ নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবদারুগাছগুলোর দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। কোনো দিন এই গাছগুলোকে সবুজের এমন উজ্জ্বলতা ছাড়াতে দেখেনি কেউ। চোখ চেপে ধরা এমন সৌন্দর্য নিয়ে গাছে গাছে নতুন পাতার মেলা বসেছে। গত বছর এই ক্যাম্পাসের মঙ্গল শোভাযাত্রার অগ্রভাগে হেঁটে যাচ্ছিল একটি জ্যান্ত হাতি। একটি ময়ূরের প্রতিকৃতি বহন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ শোভাযাত্রা নেই। শুধু তাই নয়, সেই সড়ক আজ জনমানবহীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ তাদের ‘রেডিও চারু’ নামের তাদের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারণ করা ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে বিস্তার ঠেকাতে বাড়িতে বসে বসে এবার শিক্ষার্থীরা সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন।

রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকার সারি সারি দেবদারুগাছগুলোও তেমনি তারুণ্য ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ বৈশাখের প্রথম দিনে পদ্মা নদীর ধারের এই গ্রামে তরুণ-তরুণীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এবার সেই এলাকায় সুনসান নীরবতা।

অনেকেই মনে করছেন এই করোনা পরিস্থিতির কারণে গাড়িঘোড়া চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রকৃতি দূষণের হাত থেকে অনেকটা রেহাই পেয়েছে। সেই কারণে প্রাণপ্রকৃতি এবার নতুন করে সাজার সুযোগ পেয়েছে। রাজশাহীর তানোরের ইউসুফ মোল্লা জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করেন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৩ পরিবেশ পদক পেয়েছেন। তিনি রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭৫ হাজার গাছ রোপণ করেছেন। তার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রকৃতি এবার নতুন করে সেজেছে। তার বাড়ির পাশের পাঁচটি নিমগাছে গত চার বছর ধরে প্রায় ফুল আসা বন্ধ হয়েছিল। এবার সেই পাঁচটি গাছে বাঁধভাঙা ফুল ফুটেছে। তিনি গাছগুলোর ছবি তুলে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন প্রকৃতিতে পরিবর্তনের বিষয় খেয়াল করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, তার পরীক্ষামূলক একটি শজনে বাগান রয়েছে। তাতে ৪৪৫টি গাছ রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসের ২৬-২৭ তারিখের দিকে এই শজনে বাগানে ফুল এসেছিল, কিন্তু ৯০ ভাগ ফুল ঝরে গেছে। শজনে হয়নি। এখন সেই সব গাছে আবার নতুন করে ফুল এসেছে। দ্বিতীয় দফায় কখনো শজনে গাছে তিনি এত ফুল দেখেননি। তিনিও ধারণা করছেন করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে প্রকৃতি যেন তার নিজস্ব পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। তাই গাছে গাছে পাতার সমাহার বেশি। বৃষ্টি হয়নি, তবু সে পাতায় ধুলার দাগ পড়েনি। মলিন হয়নি। তাই এত উজ্জ্বল মনে হচ্ছে।

রাজশাহীর যে সড়ক দিয়েই হেঁটে যাওয়া যাচ্ছে সেই সড়কই ফাঁকা। যেতে যেতে মনে হচ্ছে, সড়কের দুই পাশের সারি সারি গাছের পাতারা প্রাণের উল্লাসে নিজেরাই শুধু গাইছে, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ।’