বরিশাল বিভাগে পর্যাপ্ত আইসিইউ নেই

বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার মধ্যে পাঁচটি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে এ বিভাগের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা–সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিভাগে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

গতকাল বুধবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ভোলা ছাড়া বাকি পাঁচটি জেলায় ২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, প্রতিদিন এই বিভাগে যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা এখনই বাড়াতে হবে। সব জেলা হাসপাতালে সীমিত আকারে হলেও ভেন্টিলেটর সরবরাহ, অবিলম্বে করোনা পরীক্ষার ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানো, চিকিৎসা–সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামে ফেরা লোকজনের ব্যাপারে প্রশাসন, স্থানীয় লোকজনকে তৎপর হয়ে নমুনা সংগ্রহ ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। এ বিভাগের হাসপাতালগুলোয় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৫৮টি আইসোলেশন (পৃথক রাখার) শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ১৫০টি শয্যা। বাকি ছয় জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ৪০৮টি শয্যা হয়েছে। পুরো বিভাগের মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু আইসিইউর সুবিধা আছে। এখানে ১৮টি ভেন্টিলেটর আছে। সম্প্রতি আরও ১০টি ভেন্টিলেটর এই হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের কাজ চলছে।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বরিশাল বিভাগে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার প্রস্তুতি নেওয়ার দাবি জোরালো হতে থাকে। এক সপ্তাহ আগে অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে দলে দলে মানুষের গ্রামে ফেরার ঘটনায় ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এরপর হাসপাতালগুলোয় প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে দুজন করে চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে করোনা চিকিৎসার বিষয়ে তিন দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অন্য চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের অনলাইনে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, নিজেদের, রোগী ও অন্যদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করে কাজটি করতে পারবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন আছে। গত সোমবার বরিশালে একজন চিকিৎসক, এক নার্স ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
এ বিভাগের ছয়টি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় জেলায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৪৬টি জরুরি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমে একাধিক চিকিৎসক ছাড়াও নার্স, স্বাস্থ্য সহকারীদের রাখা হয়েছে। রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৩ জন টেকনোলোজিস্টকে। তবে কারোরই আগের অভিজ্ঞতা নেই। অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের এ কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাড়া ছয় জেলায় কোনো হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন বললেন, ‘চিকিৎসকসহ অন্যান্য যেসব সংকট থাকুক না কেন আমরা আমাদের সব শক্তি দিয়েই করোনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না।’
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই কলেজে ৮ এপ্রিল করোনা পরীক্ষাগার (ল্যাব) চালু করা হয়। পরদিন রাতেই ল্যাবটির পিসিআর যন্ত্রের বায়োসেফটি কেবিনেট নামের একটি যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হলেও এর পরীক্ষার সক্ষমতা কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে যায়। ফলে আগে যেখানে ল্যাবটিতে প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হতো এখন সেখানে ২০টির বেশি করা যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’