যশোরে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

রাসেল রানা: ফাইল ছবি
রাসেল রানা: ফাইল ছবি

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ ওরফে রাসেলকে (২৩) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

দুর্বৃত্তদের হামলা ঠেকাতে গিয়ে রাসেলের বড় ভাই আল-আমিন (২৬) জখম হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাব্বির ও আল–আমিন যশোর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের সালেক মৃধার ছেলে। সালেক মৃধা সদর উপজেলার আবরপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন। সাব্বির যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকার মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আল–আমিনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ ও হতাহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে সালেক মৃধার বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরে ইউপি সদস্য চায়না খাতুন ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে তালিকা তৈরির কাজ করছিলেন। এ সময় স্থানীয় যুবক সামিরুল (২৮) ও তার দুই সহযোগী দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাব্বির তাঁদের মোটরসাইকেল থামিয়ে গালমন্দ করেন। এতে সামিরুল ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সামিরুল তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সাব্বিবের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধরে আনার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে সাব্বিরের ভাই আল-আমিনকে কুপিয়ে জখম করে সাব্বিরকে ধরে পাশের আমবাগানে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে কোপ দিয়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাব্বিরকে মৃত ঘোষণা ও আল–আমিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

জানতে চাইলে সাব্বিরের বাবা সালেক মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে ত্রাণ বিতরণের জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলছিল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সামিরুল ও তার সহযোগী পিচ্চি বাবু সেখানে গেলে আমার ছেলে সাব্বির তাদের মোটরসাইকেল আস্তে চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে সামিরুল ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের মধ্যেই সাব্বিরকে হত্যা করার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দেন। পরে বাড়ি থেকে সাব্বিরকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঠেকাতে গেলে অপর ছেলে আল–আমিনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। পুরো ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছে। বাবা হয়ে আমি কিছুই করতে পারিনি। এর আগে পাঁচবার তারা সাব্বিরের ওপর হামলা করে।’

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই এলাকায় দুটি পক্ষ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগের নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ দুপক্ষের নেতৃত্ব দেন। সাব্বির ও আল–আমিন শাহারুলের পক্ষে এবং হত্যাকাণ্ডে যাদের নাম আসছে, তারা শহীদুলের পক্ষে রয়েছেন। স্থানীয় আধিপত্যে বিস্তারের দ্বন্দ্ব তাদের অনেক দিন আগে থেকেই চলছে।

জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষ রয়েছে। পুরোনো শত্রুতার জেরে সাব্বিরকে হত্যা করা হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।’