সড়কে কড়াকড়ি, খাল সাঁতরে গ্রামে ঢুকছেন অনেকে

হাতে ব্যাগ নিয়ে খাল পার হচ্ছেন এক ব্যক্তি। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
হাতে ব্যাগ নিয়ে খাল পার হচ্ছেন এক ব্যক্তি। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বরিশালে ঢোকার বিভিন্ন পথে পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। এরপরও গৌরনদীতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অনেকে খাল সাঁতরে পার হয়ে বিভিন্ন গ্রামে ফিরছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকের কাজ করতেন।

পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে গত রোববার সন্ধ্যা থেকে বরিশাল জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে প্রশাসন। এই জেলায় ঢোকা ও বের হওয়া ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেন জেলা প্রশাসক। এ নির্দেশনা মানাতে জেলায় ঢোকার প্রতিটি পথে বসানো হয় চৌকি। এসব চৌকি তদারকি করছেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মাদারীপুরের কালকিনির সঙ্গে গৌরনদীর ১২টি সীমান্তপথ বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি জেলাটি লকডাউন করে প্রশাসন। কিন্তু এরপর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে শত শত মানুষ নানাভাবে এলাকায় ফেরা শুরু করেন।

জানতে চাইলে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, অন্য জেলা থেকে কাউকে বরিশালে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গৌরনদীর ভূরঘাটা ও কালকিনির মসজিদ বাড়ি সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ নৌকা, রিকশাভ্যান ও হেঁটে ফিরছেন। কোনোভাবেই প্রশাসন তাঁদের থামাতে পারছে না। বরিশালে ঢুকতে গিয়ে প্রতিদিন ভূরঘাটায় পুলিশি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। এ কারণে অনেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভূরঘাটা খাল সাঁতরে পার হচ্ছেন।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল হোসেন ও ব্যবসায়ী আবদুর রহিম বলেন, মহাসড়ক দিয়ে বরিশাল ঢুকতে না পেরে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ফেরা শত শত লোক খাল সাঁতরে পার হয়ে বরিশালে ঢুকছেন। খালটি অনেক বড় এবং কোথাও কোথাও কচুরিপানা থাকায় সাঁতরে পার হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে কালকিনির ডাসার, নবগ্রাম, শশীকর, বালীগ্রাম, মসজিদ বাড়ি এবং গৌরনদীর বাকাই ও সমরসিংহ এলাকা দিয়ে খাল সাঁতরে পার হচ্ছেন।

সাঁতরে খাল পার হওয়া উজিরপুরগামী ছবর আলী বলেন, ‘মোরা গার্মেন্টসে কাম করি। কাম বন্ধ। আতে টাহা-পয়সা নাই, খাওন নাই। নারায়ণগঞ্জে থাইক্কা করমু কী? হেরপর ওহানে করোনার ভয় আছে। হেইয়ার লাইগ্যা বাড়ি রওয়ানা হইয়া আইছি। বাড়ি যাইতে অইব। হেইয়ার লাইগ্যা পলাইয়া খাল পার অইছি। এহন এক রহম বাড়ি যাইতে পারমু।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের গৌরনদীর সীমান্তবর্তী ভূরঘাটা সেতুতে পুলিশি চৌকি বসানো হয়েছে। সেখানে দিনরাত পাহারা চলছে। একটি মানুষও যাতে সীমান্ত পার না হতে পারেন, তা নিশ্চিতকরণে আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। এরপরও সেতুর নিচ দিয়ে এবং খাল সাঁতরে অনেকে বরিশালে ঢুকছেন। এ ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’