শের-ই-বাংলা মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ড লকডাউন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড লকডাউন ঘোষণা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এই ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী ২৪ জন চিকিৎসক-নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

বাকির হোসেন বলেন, তথ্য গোপন করে ওই ওয়ার্ডে একজন রোগী ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডকে (ইউনিট-৩) লকডাউন করা হয়েছে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৩ এপ্রিল জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের তথ্য গোপন করে অজ্ঞান অবস্থায় এক রোগীকে তাঁর আত্মীয়রা হাসপাতালের চারতলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ইউনিট-৩-এ ভর্তি করেন। এরপর গত মঙ্গলবার ওই রোগীর এক্স-রে করা হলে তার প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয় এবং তাৎক্ষণিক তাঁকে আইসোলেশন ইউনিটে পাঠান তাঁরা। এরপর ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ল্যাবে পাঠানো হয়। গতকাল রাত আটটার দিকে পাওয়া প্রতিবেদনের ফলাফলে ওই রোগীর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ইউনিট প্রধানদের এক সভায় ইউনিটটি লকডাউন করা হয়। পাশাপাশি ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারী ২৪ জন চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

ছয়জন নতুন করে আক্রান্ত
বরিশালে গতকাল নতুন করে তিন স্বাস্থ্যকর্মী, এক সাংবাদিকসহ ছয়জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বরিশালে একজন চিকিৎসক, একজন নার্সসহ ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হওয়া ছয়জনের পাঁচজন বরিশালের এবং অপর একজন বরগুনার বামনা উপজেলার বাসিন্দা।

বরিশালের সিভিল সার্জন মনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বরিশালে নতুন আক্রান্ত হওয়া নতুন পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী এবং বাকি দুজনও একই উপজেলার বাসিন্দা।

এর আগে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা শনাক্ত হওয়া একজন রোগীর সংস্পর্শে আসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই রোগী সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে ওই রোগীসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নার্স, এক অফিস সহকারীসহ (চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) দুই স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে ১৩ এপ্রিল প্রাপ্ত রিপোর্টে তাঁদের তিনজনের শরীরেই করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি লকডাউন করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয় এবং আরও কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। গতকাল তাঁদের পরীক্ষার প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে তিনজনের শরীরে করোনার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভাষ সরকার জানান, করোনা শনাক্ত হওয়া তিনজনের মধ্যে একজন নার্স, একজন অফিস সহায়ক ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন।

বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত বরিশালের বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদীতে মোট ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মুলাদীতে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হলে তা পজিটিভ আসে।