হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে ছিলেন যুবক, আসেননি স্বজনেরা

ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সুনামগঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সুনামগঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দার মেঝেতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন এক যুবক। তাঁর শরীরে প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে ছিল সর্দি ও কাশি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁর জ্ঞান ফেরে। এরই মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে করোনার আতঙ্ক। বিষয়টি জানানো হয় উপজেলা প্রশাসনকে।

একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলে সিদ্ধান্ত নেন ওই যুবককে সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে পাঠানোর। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। কিন্তু দুই ঘণ্টা চেষ্টার পরও তাঁর বাবা, ভাই কিংবা পরিবারের কাউকে আনা যায়নি। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়ার ভয়ে ওই যুবকের স্বজনেরা কেউ আসতে চাননি। পরে রাত ১১টার দিকে একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে তাঁকে সিলেটে পাঠানো হয়।

ছাতক উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ওই যুবক (২৫) ঢাকার কেরানীগঞ্জে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করতেন। গত ২৫ মার্চ তিনি ছাতকে নিজের বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি ছিলেন তাঁর বোনের বাড়ি ছাতকের আরেকটি গ্রামে। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।

ওই যুবক চিকিৎসকদের জানান, তিনি কয়েক দিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভুগছেন। এত দিন বাড়িতেই ছিলেন। এখন অবস্থার অবনতি হাওয়ায় তিনি হাসপাতালে একাই এসেছেন। হাসপাতালে আসার পর শারীরিক দুর্বলতার কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। এরপর কী হয়েছে তিনি আর বুঝতে পারেননি।

ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, ওই যুবকের জ্বর, সর্দি, কাশি আছে শুনে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লোকজন ছাড়া অন্য যাঁরা ছিলেন, তাঁরা যে যেভাবে পেরেছেন হাসপাতাল ছেড়েছেন। একপর্যায়ে ছাতক শহরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।

ছাতক পৌর শহরের নোয়ারাই এলাকার বাসিন্দা ও ছাতক উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, ছাতকে করোনা রোগী পাওয়া গেছে—এমন খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শহরে। এতে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আগে লকডাউনের মধ্যেও শহরে কিছু মানুষের ঘোরাফেরা ছিল। কিন্তু করোনা রোগী পাওয়ার খবরে পুরো শহরে নীরবতা নেমে আসে।

ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব চক্রবর্তী বলেন, ওই যুবক একাই এসেছিলেন। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ আছে। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সিলেটে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের লোকজনের জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তাঁরা কেউ না আসায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে পরে তাঁকে সিলেটে পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে প্রথমে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে পাঠানোর কথা। যেহেতু ছাতক সিলেটের কাছাকাছি, তাই ইউএনও ও জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে সরাসরি সিলেটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ছাতকের ইউএনও মো. গোলাম কবির বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে গতকাল রাত ১১টায় তাঁকে সিলেট পাঠানো হয়। সেখানেই তাঁর নমুনা সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হবে। নমুনা পরীক্ষার পরই আসলে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানা যাবে।