চিকিৎসকদের বের না হতে বাড়িওয়ালাদের চাপ

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাড়িতে থাকতে বাড়িওয়ালারা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত করোনা-আতঙ্কে বাড়িওয়ালারা চিকিৎসকদের হাসপাতাল বা অন্য কোথাও থাকতে বলছেন। গত কয়েক দিনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ময়মনসিংহ শাখায় এমন অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা কার্যক্রম গতিশীল রাখার জন্য এবং যেকোনো সমস্যা ও বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে স্বাচিপ একটি সমন্বয়ক সেল চালু করেছে। এই সেলের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি ও চিকিৎসক মতিউর রহমান ভূঁইয়া। তিনি জানান, শহরে বসবাসরত অর্ধশতাধিক চিকিৎসক কয়েক দিন ধরে মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁকে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন।

জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের অধিকাংশই ভাড়া বাসায় থাকেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের চিকিৎসা দিতে হয়। বাড়িওয়ালারা মনে করছেন, হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করায় চিকিৎসকেরাও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। আবার তাঁদের মাধ্যমে ভাড়া বাসার অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন। এ জন্য তাঁরা বাড়িতে না থাকতে মানসিক চাপ দিচ্ছেন।

গত সোমবার জেলার গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন। আগে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালে গত বুধবার আরও তিন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

এর আগে গত রোববার লকডাউন করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ। গত শনিবার রাতে ময়মনসিংহ শহরের নয়াপাড়া এলাকায় এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর, বাড়ির মালিক ও এলাকাবাসীর দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। ওই চিকিৎসক ভাড়া বাসায় কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। চলতি সপ্তাহে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পরই বাড়িওয়ালারা তাঁদের বাড়িতে ভাড়া থাকা চিকিৎসকদের বাইরে থাকতে মানসিক চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে যতক্ষণ থাকা হয়, ততক্ষণ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে রোগীদের চিকিৎসা দেন তাঁরা। এরপরও চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাড়িওয়ালারা যেভাবে মানসিক চাপ দেওয়া শুরু করেছেন, তাতে নিজেদের স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, চিকিৎসকদের প্রতি বাড়িওয়ালাদের মানবিক আচরণ করতে হবে ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। যেসব বাড়িওয়ালা এমন অন্যায় আচরণ করছেন, তাঁদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত। আর এমন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ঢাকার মতো ময়মনসিংহের চিকিৎসকদের জন্য শহরের বিভিন্ন হোটেল বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেনে বিএমএ ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও চিকিৎসক হোসেন আহাম্মদ গোলন্দাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন এ বি এম মশিউল আলম জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬১ জন চিকিৎসক এবং অন্যান্য উপজেলায় ২৬৫ জন চিকিৎসক কর্মরত। আর নার্স কর্মরত আছেন ৯ শতাধিক। করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় তাঁরা প্রত্যেকেই সচেষ্ট আছেন। তাই তাঁদের তাড়িয়ে না দিয়ে সব বাড়িওয়ালার তাঁদের কাজে সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া উচিত।