বেঁচে ফিরলে আবার নামব রাস্তায়: করোনায় আক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবক

জীবাণুনাশক ছেটাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরা। ময়মনসিংহ। ছবি: সংগৃহীত
জীবাণুনাশক ছেটাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী তরুণেরা। ময়মনসিংহ। ছবি: সংগৃহীত

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক তরুণ। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার কাজে নিয়োজিত থাকার মধ্যে আক্রান্ত তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে জানানো হয়েছে, ওই তরুণের করোনা পজিটিভ।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলেও তাঁরা হতাশ নন। তাঁরা হাল ছাড়বেন না। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই তরুণ বর্তমানে শহরের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যদি বেঁচে ফিরি, দেখা হবে। আবার নামব রাস্তায়, কথা দিলাম।’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর মুঠোফোনে অনেক কল আসতে থাকে। একপর্যায়ে ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হন তিনি। তার আগে তিনি ফেসবুকে ‘দুঃখিত’ বলে স্ট্যাটাস দেন, কারও ফোন ধরতে পারছেন না বলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ ময়মনসিংহ শহরকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত রাখার জন্য কাজ শুরু করেন একদল স্বেচ্ছাসেবী তরুণ। তাঁরা পরিচিত বন্ধু ও সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ১০ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা এর নাম দেন শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র (এসপিবিকে)। এরপর একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় জীবাণুনাশক ছেটানোর পর মেশিন, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক সংগ্রহের কাজে নামেন তাঁরা। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করেন, নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে পরামর্শ দেন এবং মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করেন। একই সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দিকে সেবার হাত বাড়িয়ে দেন। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, অফিস, মসজিদ, মন্দির, রাস্তায় চলমান গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে থাকে স্বেচ্ছাসেবক দলটি। তাঁদের এই উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রশংসা পায়।

জেলা প্রশাসকের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিভি-১৯ পিভিজি এম-২০’ দলেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন ওই তরুণ ও তাঁর সহযোগীরা। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি হতদরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। দুস্থ পরিবারের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

করোনা শনাক্ত হওয়া ওই স্বেচ্ছাসেবক তরুণ ও তাঁর দল সম্পর্কে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ময়মনসিংহ শহরকে সুরক্ষিত রাখতে তাঁদের অবস্থান থেকে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমরা করোনায় আক্রান্ত ওই তরুণের পাশে আছি, নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’