প্রথম সংক্রমণ ছড়ায় ৮ দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে শুরুতে বিদেশফেরত ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সীমিত থাকলেও এখন তা ব্যাপকভাবে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। ৮ মার্চ যে তিনজন রোগী প্রথম শনাক্ত হন, তাঁদের দুজন ছিলেন ইতালিফেরত। অন্য একজন ইতালিফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তবে শুধু ইতালি নয়, কমপক্ষে আটটি দেশ থেকে আসা প্রবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মাধ্যমেই শুরুতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, বিদেশ– ফেরতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইতালি থেকে আসা ছয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁদের সংস্পর্শে আসা বেশ কয়েকজনও শনাক্ত হন। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দুজন, সৌদি আরব থেকে আসা দুজন এবং জার্মানি, ফ্রান্স, বাহরাইন, ভারত, কুয়েত থেকে আসাদের একজন করে শনাক্ত হন।

২৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্ত শনাক্ত ছিলেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ১৪ জন বিদেশফেরত এবং ২১ জন বিদেশফেরত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত বাকি চারজনের সংক্রমণের উৎস নিয়ে কাজ করছিল আইইডিসিআর। ২৫ মার্চ আইইডিসিআর জানায়, তাঁরা দুজনের সংক্রমণের উৎস বা কার মাধ্যমে ওই দুই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। তখন থেকে দেশে সীমিত পরিসরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ) শুরু হয়। এরপর ক্রমে সেটা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।

এখন অবশ্য রাজধানীর পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্র (এপিসেন্টার) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন ওই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ছয়টি জেলায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন, যাঁরা সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে গেছেন। নারায়ণগঞ্জেও শুরুতে সংক্রমণ ​চিহ্নিত হয়েছিল বিদেশফেরতদের মধ্যে।

এ ছাড়া শুরুতে আইইডিসিআর বাংলাদেশে সংক্রমণের যে পাঁচটি ক্লাস্টার (একটি জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে অনেক রোগী) চিহ্নিত করেছিল, তার একটি নারায়ণগঞ্জ। বাকি চারটি ক্লাস্টার হলো রাজধানীর বাসাবো, টোলারবাগ, মাদারীপুরের শিবচর ও ও গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর। এর মধ্যে টোলারবাগ ছাড়া বাড়ি চারটি ক্লাস্টারেরই সংক্রমণ শুরু হয় বিদেশফেরতদের মাধ্যমে। তাতে উপরিউক্ত আটটি দেশ থেকেই ফিরে আসা ব্যক্তিরা ছিলেন।

গত বছরের শেষে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসেন। সেখানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনে সরকার। তাঁদের সবাইকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত দেশে চীনফেরত কোনো ব্যক্তির মধ্যে বা তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এরপর ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা​ ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে করতে পারেনি সরকার। বিশেষ করে গত ১৪ মার্চ ইতালি​ থেকে ফেরা ১৪২ জন প্রবাসীকে হজ ক্যাম্পে নেওয়ার পর বিক্ষোভের মুখে তাঁদের বেশির ভাগকে ছেড়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। তখন তাঁদের একাংশকে গাজীপুরের পুবাইলে নিয়ে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। বাকিদের নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। এর আগে পরে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত থেকেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ফিরে আসেন। তাঁদের ​বড় অংশই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ​বাড়িতে ​১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেননি।