করোনায় আক্রান্ত অবরুদ্ধ পরিবারটির জন্য নেই খাদ্যসহায়তা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুর সদর উপজেলার একটি গ্রামের এক পরিবারের তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পরিবারটি অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়নি বলে পরিবারটি দাবি করেছে। এ ছাড়া আক্রান্ত তিনজনের সঙ্গে একই ঘরে থাকছে শিশুসহ দুজন। এ কারণে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

গতকাল রোববার ওই গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বাড়ির কর্তা স্থানীয় বাজারে স্বর্ণশিল্পীর কাজ করেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জে। সম্প্রতি স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে সেখানে বেড়াতে যান তিনি। নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দেখে শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ৯ এপ্রিল তিনি শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ওই পরিবারের চারজনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠায়। ১৩ এপ্রিল জানা যায়, তাঁদের তিনজন (ওই ব্যক্তির স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ি) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আর তাদের পাঁচ মাস বয়সী সন্তানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। পরে প্রশাসন ওই ব্যক্তির বাড়ি ও তাঁর ভাইয়ের বাড়ি অবরুদ্ধ করে দেয়।

ওই পরিবারের বসবাসের জন্য একটি ঘর আছে। ওই ঘরেই আক্রান্ত তিন ব্যক্তি এবং শিশুসহ সুস্থ দুজন থাকছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক নারী রান্নাবান্না করেন, সবাই সেই খাবার খান।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা পরিবারটিকে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, দুই কেজি আলু ও এক লিটার সয়াবিন তেল দিয়েছেন। এরপর আর ওই পরিবারের কোনো খবর কেউ নেয়নি। স্বাস্থ্যকর্মী এস এম মোক্তার হোসেন দুই দিন পরপর ফোন করে শুধু তাদের স্বাস্থ্যের খবর নেন। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটি খাদ্যসংকটে পড়েছে। প্রয়োজনীয় খাবারই যেখানে জোগাড় করতে পারছে না, সেখানে সেরে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবারের কথা পরিবারটি ভাবতেই পারছে না।

ওই ব্যক্তি গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরের খাবার শেষ। চরম বিপাকে পড়েছি। আমার একটাই ঘর। তাই আক্রান্ত তিনজনের সঙ্গে আমাকে ও আমার শিশুসন্তানকে থাকতে হচ্ছে। কাউকে পাশে পাচ্ছি না। শঙ্কায় আছি। অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করব, তা ভেবেই শিউরে উঠি।’ তিনি জানালেন, গ্রামের মানুষ তাদের প্রতি বিরক্ত। নানা কটু কথা শুনতে হচ্ছে। তবে প্রতিবেশী স্বজন এক পরিবার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাধ্যমতো সাহায্য করছে।

ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারিভাবে পরিবারটিকে সহায়তা করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ২৫৫ ব্যক্তিকে সহায়তা করার জন্য ত্রাণ আমি পেয়েছি। এর অর্ধেক সাংসদের সমর্থকেরা বিলি করেছেন। সেখান থেকে কেউ তাদের দিয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’

শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কোনো সুস্থ ব্যক্তির থাকা নিরাপদ না। তা ছাড়া শিশুটির সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে। সব সময় আক্রান্ত মায়ের কাছে থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এটা ঠিক হচ্ছে না।’

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবদুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘ওই পরিবারের তিনজন এখনো ভালো আছেন। তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, ঘরের ভেতর নিজস্ব আইসোলেশনে থাকতে। তাঁরা যদি তা মানতে না পারেন, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আর ফোনে খোঁজখবর নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। আইইডিসিআরের নিয়ম অনুযায়ী, উপসর্গ না আসা পর্যন্ত তাদের নিজেদের ঘরেই থাকতে হবে।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একটি পরিবারের খাদ্যসংকট আছে, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কাছে খাদ্যসহায়তা পাঠাব। আর সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে তাদের হাসপাতালের আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’