রমজানে নামাজের সময় সব মসজিদ খোলা রাখার আহ্বান

সুস্থ ব্যক্তিদের জুমা, পাঁচ ওয়াক্তের জামাত ও তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য আসন্ন রমজান মাসে নামাজের সময় সব মসজিদ খোলা রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আলহাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফিসহ কয়েকজন আলেম আজ মঙ্গলবার এই আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, মসজিদ খোলা রাখা হলেও প্রতি ওয়াক্তের জামাতে পাঁচজনের বেশি অংশ নেওয়া যাবে না। আর এই পাঁচজন হবেন মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। এ ছাড়া জুমার জামাতে অনধিক ১০ জন শরিক হতে পারবেন। বাইরের মুসল্লি মসজিদে গিয়ে জামাতে অংশ নিতে পারবেন না।

এদিকে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ শেখ সম্প্রতি বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে রমজানে তারাবির নামাজ মসজিদে আদায় করতে না পারলে তা বাড়িতে আদায় করা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সৌদি আরবের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আগেই আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায়ের নির্দেশনা সংবলিত একটি ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশটির মসজিদগুলোয় জামাতে নামাজ আদায়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হবে না বলেও জানায় সৌদি সরকার।

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর স্তরের সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার পর এই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আলহাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া নামের সংস্থাটি গঠন করা হয়। সংগঠনটির দেওয়া আজকের বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানুল মোবারক আসন্ন। এই মাস রহমত ও নাজাতের মাস। করোনাসহ সব বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য এই মাসের সদ্ব্যবহার একান্ত জরুরি।

সংগঠনটি শর্ত সাপেক্ষে মসজিদ খোলার কথা বলেছে। তাঁদের ১৪ দফা শর্তের মধ্যে রয়েছে, মসজিদে কার্পেট, জায়নামাজ বা গালিচা না বিছানো, জুমার বয়ান, খুতবা, জামাত ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা এবং নামাজের আগে-পরে মসজিদের ভেতরে বা সামনে জড়ো হওয়া যাবে না। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের মুসল্লি এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী পর্যন্ত বালকদের মসজিদে না আসা, যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে এবং যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন কিংবা যারা এসব মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন তাঁরা মসজিদে আসবেন না। যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত তারা এবং যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাঁরাও আসবেন না। এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে মসজিদকে জীবাণুনাশক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং ওযুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখতে হবে। মুসল্লিদের দুজনের মাঝে অন্তত দুই ফুট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো,বাসা থেকে অজু , হাত ও পা ভালোভাবে ধুয়ে মুছে মসজিদে যেতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান,পরস্পর হাত মেলানো ও আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকা, সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন না করা, মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের প্রশাসনের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে প্রতি মসজিদে একটি করে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করতে হবে।

শাহ আহমদ শফি ছাড়াও বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন, আলহাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার কো চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুফতি মো. ওয়াক্কাস, মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ প্রমুখ।