টোলারবাগ ও বাসাবোয় সংক্রমণের গতি এখন ধীর

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবোয় করোনাভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণের কথা জানিয়েছিল। আইইডিসিআর ৮ মার্চ থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, টোলারবাগ ও বাসাবোয় সংক্রমণ শনাক্তের গতি অপেক্ষাকৃত ধীর।

টোলারবাগ ও বাসাবো—দুই জায়গাতেই আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৯। গুচ্ছ সংক্রমণের কারণে টোলারবাগ লকডডাউন হয়ে আছে এক মাস ধরে। আর বাসাবো লকডাউন হয় ৭ এপ্রিল। দুই জায়গাতেই এলাকাবাসী উদ্যোগী হয়ে লকডাউন করেন নিজ নিজ এলাকা। গতকাল মঙ্গলবার টোলারবাগ ও বাসাবোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। টোলারবাগের বাসিন্দাদের কথায় ছিল স্বস্তি, তবে বাসাবো এখনো নিজেদের অবস্থানকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে।

টোলারবাগে সমস্যার সূত্রপাত ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষের মৃৃত্যুর পর। তিনি মারা যাওয়ার দুই দিনের মাথায় তাঁরই এক প্রতিবেশী মারা যান। এলাকাবাসী টোলারবাগে কঠোরভাবে লকডাউন জারি করে ২১ মার্চ থেকে।

টোলারবাগে বাড়ি মালিক সমিতি ইয়থ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট রিয়াদ খান প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল। এই এলাকায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৯। দুজন মারা গেছেন। অন্যরা ভালো আছেন। দিন দশেক আগে ৪২ জনের নমুনা নিয়ে গেছে আইইডিসিআর। একজনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। রিয়াদ আশা করেন, যেভাবে তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন, এই ধারা অব্যাহত রাখলে হয়তো আর তেমনভাবে সংক্রমণ ছড়াবে না।

ঠিক কী করেছেন টোলারবাগের মানুষ? জানা গেছে, টোলারবাগে ঢোকা ও বেরোনোর পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টোলারবাগের এই এলাকার রাস্তা ধরে যাঁরা অন্য রাস্তায় উঠতেন, তাঁদের এখন একটু ঘুরে যেতে হচ্ছে। বন্ধ আছে মোড়ের আড্ডা, দোকানপাটও। স্থানীয় মুদি দোকানগুলো দিনে চার ঘণ্টার বেশি খোলা থাকছে না। সিটি করপোরেশন এক দিন পরপর এসে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবে সমস্যা একটাই, এ এলাকায় শতাধিক নিম্নবিত্ত মানুষ দিন কাটাচ্ছেন আধপেট খেয়ে। নিম্ন আয়ের এই মানুষের সংখ্যা শতাধিক। প্রথম প্রথম জেলা প্রশাসন থেকে কিছু ত্রাণ দেওয়া হয়েছিল, এখন আর কিছু পাচ্ছেন না। এলাকা লকডাউন হওয়ায় কাজেও বেরোতে পারছেন না তাঁরা।

বাসাবোতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, সব মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম রেজা।

বাসাবোয় করোনাভাইরাসের সূত্রপাত হয়েছিল বিদেশ থেকে আসা এক ব্যক্তির মাধ্যমে। তাঁর পরিবারেরই ছয়জন এ রোগে আক্রান্ত হন। এরপর বাঁশ ফেলে বাসাবো এলাকায় যান ও জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন সাধারণ মানুষ। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এখনো কয়েকটি কারণে বাসাবো ঝুঁকিতে। মাদকের আখড়া বলে পরিচিত ওহাব কলোনিতে আগের চেয়ে জনসমাগম কম হলেও, এখনো আড্ডা হচ্ছে। স্থানীয় বউবাজারের জনসমাগম ঠেকানো যাচ্ছে না। পাশেই মাঠ, পার্ক বা খিলগাঁও উড়ালসড়কের নিচে এই বাজার স্থানান্তর করা যায় বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ত্রাণ বিতরণে অব্যবস্থাপনাও এলাকার জন্য ক্ষতির কারণ বলে মনে করেন বাসিন্দারা। দিন দুয়েক আগে উত্তর বাসাবো কমিউনিটি সেন্টারে ত্রাণের কথা বলে শত শত মানুষকে ডেকে আনা হয়। পরে তাঁদের ফিরে যেতে বললে উত্তেজিত জনতা মারমুখী হয়ে ওঠেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে এই সমস্যাগুলোর সমাধান চান।

টোলারবাগ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেনের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নমুনা সংগ্রাহকেরা বাসায় বাসায় যান এবং উপসর্গ আছে বলে ধারণা করা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করেন। আইইডিসিআর সামাজিক কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। টোলারবাগে প্রতিষ্ঠানটি ঘরে ঘরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ এবং ফলোআপ করেছে। সে কারণে এখানে সংক্রমণের গতিকে কিছুটা কমিয়ে আনা গেছে। প্রক্রিয়াটি রাজশাহীতেও অনুসরণ করা হচ্ছে। সারা দেশেই এভাবে হওয়া উচিত। এখন রোগটির সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িয়ে গেছে যে মানুষ পরীক্ষার সুযোগ বাড়ার পরও আর পরীক্ষা করাতে যাচ্ছে না।

ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার চিত্র
সারা দেশে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৭২। তাঁদের মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৭০ জন। ঢাকার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রয়েছেন রাজারবাগে। এই সংখ্যা ৭০। এরপরই রয়েছে মোহাম্মদপুর। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪।

এর বাইরে লালবাগে ৩৯ জন, যাত্রাবাড়িতে ৩৭, বংশালে ৩৪, চকবাজারে ৩২, ওয়ারিতে ৩০, ধানমন্ডিতে ২৬, উত্তরায় ২৫, তেজগাঁওয়ে ২৪, গেন্ডারিয়ায় ২২, মিরপুর-১৪ নম্বরে ২১, শাঁখারীবাজারে ২০ জন, টোলারবাগ, বাসাবো ও গুলশানে ১৯ জন করে, শাহবাগ, মিরপুর-১১ ও আজিমপুরে ১৬ জন করে, মিরপুর-১ নম্বরে ১৩, মিরপুর-১২ নম্বরে ১২, বাবুবাজার ও গ্রিন রোডে ১১ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে। এই সংখ্যা ৫০৮। তা ছাড়া গাজীপুরে ২৬৯, কিশোরগঞ্জে ১৪৬ ও নরসিংদীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৬ জন।