৩ মাস মজুরি নেই পাটকল শ্রমিকদের, চরম দুর্ভোগ

খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়েছে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের। প্রায় তিন মাস মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে দুর্ভোগ–দুর্দশা। সরকারিভাবে যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা জোটেনি সব শ্রমিকের ভাগ্যে। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিক কাটছে অনেক শ্রমিকের।

এরই মধ্যে বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে মজুরি পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরে শ্রমিকদের বাঁচাতে অনতিবিলম্বে অন্তত কয়েক সপ্তাহের মজুরি পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক সিরাজুল ইসলামের পরিবারে আছে চারজন সদস্য। বেশ কিছু দিন আগে জেলা প্রশাসন থেকে তিনি এক প্যাকেট খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওই প্যাকেটের মধ্যে ছিল সাত কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, আধা লিটার তেল ও দুই কেজি আলু। ওই খাবার দিয়ে মাত্র কয়েকদিন চলেছে। এখন আবার আগের মতো দোকান থেকে বাকি করে মালামাল কিনতে হচ্ছে। তবে দোকানদাররাও আর বাকি দিতে চাইছেন না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার চেয়ে না খেয়ে মরার আশঙ্কা চেপে ধরেছে।

তবে এ ধরনের কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, আগে মিল বন্ধ থাকলে রিকশা বা ইজিবাইক চালিয়ে কোনো রকম সংসার চালানো যেত। কিন্তু এখন সবই বন্ধ আছে। অন্যদিকে হাতে কোনো টাকা নেই। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে কোনো রকম দিন চলছে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে বারবার বলেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে দিলে ওই সমস্যা থাকবে না।

প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, তাঁরা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি) আলটিমেটাম দিয়েছেন। মজুরি পরিশোধ করা না হলে তাঁরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, প্রতিটি পাটকলে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। অধিকাংশ শ্রমিকই কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি। এর ফলে শ্রমিকদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। এসব ব্যাপারে তাঁরা একাধিকবার বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কবে মজুরি দিতে পারবে সে বিষয়ে সেখান থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলতে পারছেন না কেউ।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. খলিলুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের চেয়ে এখন শ্রমিকদের মধ্যে না খেয়ে মারা যাওয়ার ভয়ই বেশি। কিছু কিছু মুদি দোকান খোলা থাকলেও তাঁরা পাটকল শ্রমিকদের আর বাকিতে জিনিস দিচ্ছেন না। সাধারণ শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামতে চাইছেন। তাদের কোনোমতে বুঝিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কতদিন তাঁরা চুপচাপ থাকবেন?

খুলনা অঞ্চলে মোট ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আছে। এর মধ্যে খুলনায় সাতটি ও যশোরে দুটি। এসব পাটকলে প্রায় ২০ হাজারের মতো স্থায়ী শ্রমিক আছেন।

জানতে চাইলে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়কে জানানো হয়েছে। সেখান থেকেই শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।