অস্ট্রেলিয়ায় আটকা ১৭০ বাংলাদেশি ফিরতে চান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফয়সাল ওয়াহাবের সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মা অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে তীব্র হয়ে উঠে। বাংলাদেশ সরকার বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সিডনিতেও ফয়সালরা লকডাউনে পড়েন। তাঁর মায়ের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, ওদিকে বাংলাদেশে বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ফয়সালের মাসহ এমন প্রায় ১৭০ জনের মতো বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়াতে আটকা পড়েছেন। তাঁরা এখন দেশে ফিরতে চান।

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, 'এখানে অনেক শিক্ষার্থী আছেন। অনেকেরই অসহায় অবস্থা। বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না, কারও খাবারের সমস্যা হচ্ছে। আমার মায়ের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। ওনার ওষুধ শেষ। অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু এখানকার চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। বাবা হৃদরোগের রোগী। তিনি অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি আছেন দেশে।' ফয়সাল জানান, তাঁর মা-সহ আরও অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন সবাইকে যেন সরকার দেশে ফিরিয়ে নেন তিনি সে অনুরোধ জানান।



ঢাকায় একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত মোহাম্মদ তারেকুর রহমান মার্চে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে বেড়াতে যান। ২৯ শে মার্চ তাঁদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ২০ মার্চ বাংলাদেশ সরকার কয়েকটি দেশ ছাড়া সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। তারেকুর রহমান এ খবর জানতে পেরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ফেরার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি।



তারেকুর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ব্যাপারে সাহায্য চান। কিন্তু গত ২ সপ্তাহে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকারও বলে দিয়েছে যে যারা ভ্রমন ভিসা ও স্বল্পমেয়াদী ভিসায় আছেন তাঁদের দ্রুত অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে হবে। তারেক বলেন 'আমরা তো একটা সীমিত পরিমাণ অর্থ নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ৩ সপ্তাহ থাকার ফলে অনেক খরচ হয়ে গেছে। সামনে যদি ভিসা শেষ হয়ে যায় তাহলে আবার ভিসার আবেদন করতে গেলে ৩ জনের প্রায় ১১০০ ডলার লেগে যাবে। হেলথ ইন্স্যুরেন্সটাও চালিয়ে যেতে হচ্ছে! অস্ট্রেলিয়াতে পরিচিত অনেকেরই চাকরি চলে গেছে, লোন করার মতো আর তেমন কেউ অবশিষ্টও নেই। যে আত্মীয়ের বাসায় আছি ওনারও চাকরি চলে গেছে, এ অবস্থায় আমরা ৩ জন উনার বাসায় থাকাটাও উনাদের জন্য সমস্যা।'


তারেকের মতো এমন প্রায় ১৭০ জন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পড়ে আছেন বলে জানান ব্যাংকার মাশরুর মাহমুদ। তিনিও সেখানে বেড়াতে গিয়ে ফিরতে পারছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নিজেদের উদ্যোগেও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সবার পক্ষেও সেটা সম্ভব হবে না। আর বাংলাদেশ সরকার অনুমতি না দিলে কোনো ফ্লাইট নামতেও পারবে না ঢাকায়। এখন তাঁরা দেশে ফেরার জন্য সরকারের সহায়তা চাচ্ছেন।


এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে ইমেইলের মাধ্যমে তাঁরা প্রথম আলোকে জানায়, শিক্ষার্থীসহ যারা অস্ট্রেলিয়াতে আছেন এবং ফিরতে চাচ্ছেন তাঁদের বিষয়টি তারা বুঝতে পারছে। এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে কমিশন যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া হাইকমিশন জানায়, বিশেষ কোনো ফ্লাইটের মাধ্যমে আটকে পড়া এই বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়ে ঢাকায় সুপারিশ করা হয়েছে। এখন ঢাকার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে হাইকমিশন।


ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানোর বিষয়টিও জেনেছেন অস্ট্রেলিয়াতে আটকে পড়া এই বাংলাদেশিরা।তাঁদের মধ্যে কয়েকজন জানান, তাঁরাও চাচ্ছেন সরকার যেন এভাবে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে তাঁদের কয়েকজন ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগও করেছেন।