কেইপিজেড খুলছে কাল, আতঙ্ক-দ্বিধায় ২৫ হাজার শ্রমিক

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহন বন্ধের মধ্যেই আগামীকাল রোববার আবারও খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড)। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে শ্রমিকেরা একদিকে যেমন আতঙ্কিত, অন্যদিকে কাজে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছেন।

এর আগে গত ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি শেষে ৫ এপ্রিল কেইপিজেড খোলায় সমালোচিত হয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিন কাজ করিয়ে কেইপিজেড আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে বন্ধের মধ্যেও কেইপিজেড সামান্য পরিসরে খোলা আছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যে কীভাবে কর্মস্থলে আসা–যাওয়া করবেন, তা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন শ্রমিকেরা। কেইপিজেড খোলার খবরে দোটানায় পড়েছে আনোয়ারা উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনও। কারণ, আনোয়ারা ছাড়াও কর্ণফুলী, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা–যাওয়া করেন এসব শ্রমিক। সড়কে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কী হবে তা নিশ্চিত নয়।

স্থানীয় ও কেইপিজেড সূত্র জানায়, কেইপিজেডের ২১টি কারখানায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসসূচি হলেও তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন হয় কেইপিজেডের এসব কারখানায়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার কঠোর হলে গত ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল কেইপিজেড ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ৫ এপ্রিল কেইপিজেড খুলে পুনরায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল কেইপিজেড খোলা রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক আর দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান শ্রমিকেরা।
শ্রমিকেরা বলেন, করোনা মোকাবিলায় দুজন মানুষের মধ্যে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান নেওয়ার দরকার হলেও কেইপিজেডের শ্রমিকেরা গাদাগাদি করে আসা–যাওয়া করেন। বিশেষ করে দুপুরের খাবার খেতে গেলে হুড়াহুড়িতে পড়তে হয় সবাইকে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।

কেইপিজেডের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাও স্বীকার করেন, কেইপিজেড খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। তাঁরা আসলে কর্তৃপক্ষের কাছে অসহায়। তিনি আরও বলেন, কেইপিজেডের শ্রমিকেরা কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করেন। গণপরিবহনে বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকেরা কীভাবে কাজে আসবেন তা ভাবছেন না নীতি নির্ধারকেরা। এতে শ্রমিক-কর্মকর্তায় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।

জানতে চাইলে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেইপিজেড খুলব। প্রতিটি ফটকে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে।' গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে শ্রমিকেরা কীভাবে কাজে আসবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধিকাংশই কাছের শ্রমিক। তাঁরা আসতে পারবেন। তবে দূরবর্তী উপজেলার শ্রমিকেরা আসতে না পারলে তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে না।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।