কাক-কুকুরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন কাউন্সিলর

রান্না করা খিচুড়ি কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার। রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের মালতিনগর বকশি বাজার মোড়ে। ছবি: সোয়েল রানা
রান্না করা খিচুড়ি কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার। রোববার দুপুরে বগুড়া শহরের মালতিনগর বকশি বাজার মোড়ে। ছবি: সোয়েল রানা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। রাস্তাঘাটে মানুষের যাতায়াত হাতেগোনা, বন্ধ হোটেল-রেস্তোরাঁ। বাজার-হাটও বসছে সীমিত পরিসরে। ফলে রাস্তাঘাটে ঘুরে ঘুরে যে প্রাণীগুলো উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে বেঁচে থাকত তারা পড়েছে মহাসংকটে। করোনা সংকটময় মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া পাশাপাশি বেওয়ারিশ কুকুর এবং ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করা অভুক্ত কাঁকের মুখে প্রতিদিন খাবার তুলে দিচ্ছেন বগুড়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার। একদল স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় গত এক মাস ধরে সকাল-সন্ধ্যা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সিপার আল বখতিয়ার বলেন, ২৬ মার্চ শহরের দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায়। সাতসকালে তিনি বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে যান। এক সকালে দেখেন অভুক্ত কাঁকের দল খাবারের জন্য বকশিবাজারের বন্ধ দোকানের চালে, রাস্তায়, ভবনের ছাদে, গাছের ডালে ঝাঁপাঝাঁপি করছে। ওই দিন সকালেই বাসা থেকে ৫ কেজি চাল সিদ্ধ করে এনে কাঁকের মুখে ভাত তুলে দেওয়া শুরু করেন। এখনো প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলছে।

সিপার আল বখতিয়ার বলেন, সবকিছু বন্ধ ঘোষণার পর নিজ উদ্যোগে মহল্লার কর্মহীন ৪ হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। এ সময় মহল্লায় অভুক্ত কুকুরের ঘেউ ঘেউ কান্না বেড়ে যায়। তবে খাবারের জন্য যে এ রকম ঘেউ ঘেউ কান্না তা প্রথমে মাথায় আসেনি। শহরজুড়ে অনাহারী কুকুরের ঘেউ ঘেউ কান্না শুনে একদিন বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ফোন দেন। তিনি শহরের এসব অভুক্ত কুকুরের মাঝে খাবার বিতরণের অনুরোধ করেন। বলেন, মানুষের মতোই অসহায় এসব প্রাণী। মানুষ তো কোনো না কোনোভাবে খাবার সংগ্রহ করবে, কিন্তু কুকুর তো পারবে না। খাবার না পেলে এসব প্রাণী না খেয়ে মারা যাবে।'

সিপার আল বখতিয়ার জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অনুরোধে প্রায় এক মাস ধরে শহরের অভুক্ত কুকুরের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি। কুকুরের খাবার তৈরি করতে অস্থায়ীভাবে কয়েকজন বাবুর্চি ও স্বেচ্ছাসেবককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে ২০ কেজি চাল আর ১০ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস এবং ৫ কেজি ডাল দিয়ে রান্না হচ্ছে খিচুড়ি। সন্ধ্যায় পাতিলভর্তি এই খিচুড়ি ভ্যানগাড়িতে তুলে নিয়ে পাড়া-মহল্লার ওলি গলি থেকে রাজপথ শহরের রাজপথ ঘুরে অভুক্ত বেওয়ারিশ প্রায় ৪০০ কুকুরের মুখে এই খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। শহরের মালতিনগর এলাকায় নিজ ওয়ার্ডে এই জনপ্রতিনিধি নিজেই কুকুরকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। অন্য মহল্লার কুকুরকে খাবার তুলে দেওয়ার কাজ করছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, সবকিছু বন্ধ ঘোষণার পর দিনরাত অনাহারী কুকুরের ঘেউ ঘেউ কান্না শুনে খারাপ লাগে। এসব অসহায় প্রাণীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য পৌর কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ারকে প্রস্তাব দেন। তিনি ওই দিন থেকেই শহরজুড়ে অভুক্ত কুকুরের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো বিরল মানবিক কাজে এগিয়ে আসেন। সনাতন চক্রবর্তী বলেন, 'কুকুরের প্রতি তাঁর এ মানবিক ভালোবাসা দেখে শুধু একটা কথাই বলব,‌ ''জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”’