করোনায় রাজারবাগ যে কারণে এত ঝুঁকিতে

কোভিড-১৯
কোভিড-১৯

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে রাজধানীতে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাজারবাগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা চিহ্নিত করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুলিশ লাইনসে গাদাগাদি করে মানুষের বসবাসের কারণে রাজারবাগে যেমন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি এলাকাটাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এত বিরাট স্থাপনা ও বিপুলসংখ্যক জনবল রাতারাতি কোথাও সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও সংক্রমণ ঠেকাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার পাশাপাশি উন্নত মানের খাবার ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ট্যাবলেটও দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর যে এলাকাটি রাজারবাগ নামে পরিচিত, তার বেশির ভাগ অংশজুড়েই পুলিশের স্থাপনা, যা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস নামে পরিচিত। অল্প কিছু এলাকায় সাধারণ মানুষের বসতি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে রয়েছে পুলিশ সদস্যদের থাকার ব্যারাক ও আবাসিক কোয়ার্টার। সব মিলিয়ে এই স্থাপনায় ১০ হাজারের মতো মানুষ বসবাস করেন। তবে পুলিশ ব্যারাকের ভেতরে থাকার ব্যবস্থাটা অনেকটা হাসপাতালের খোলা ওয়ার্ডের মতো। একটি কক্ষে অনেক লোক বাস করেন। এভাবে ছয়টি ভবনে পাঁচ হাজারের মতো লোক বাস করেন। এর বাইরে আছে বিভিন্ন আবাসিক কোয়ার্টার ও স্থাপনা।

এত বিপুলসংখ্যক লোকের একসঙ্গে থাকা, খাওয়দাওয়া ও গোসলের কারণে রাজারবাগে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। গত শনিবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশে দেড় শ লোক আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে এক শর বেশি রাজারবাগের।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজারবাগের পুলিশ সদস্যদের সবাই যে ব্যারাকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, তা নয়। তাঁরা বাইরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের অজান্তে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এরপর ব্যারাকে ফিরে এসে অন্যদের সংক্রমিত করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এসব পুলিশ সদস্যের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। যে কারণে পরীক্ষায় ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার আগে তাঁরা আরও অনেককে সংক্রমিত করেছেন। পুলিশের কর্মকর্তারা এ নিয়ে চিন্তিত। সংক্রমণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক করোনা রোগী গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে অফিসে ডিউটি করে এসে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে বুঝতে পারেন শরীর খারাপ করছে। এরপর পরীক্ষায় তাঁর করোনা ধরা পড়ে। কিন্তু তিনি এই সময়ে ব্যারাকের অনেকের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছেন। তাঁর মতো একই কথা বলেন করোনায় আক্রান্ত আরও তিনজন কনস্টেবল। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ৬-৭ জন সদস্য একসঙ্গে গাড়িতে টহলে যাচ্ছেন, এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। এতে কারও শরীরে করোনা থাকলে তা সহজে অন্যকে সংক্রমিত করছে। কিন্তু এ ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই।

মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন রাজারবাগে একটি মাত্র ফটক ছাড়া সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাদাগাদি কমাতে ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্যারাকে প্রবেশের সময় সবাইকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবাইকে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা আক্রান্ত না হন। মেসে খাবারের সময় যাতে দূরে বসেন, তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ব্যারাকে গরম পানিও রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত। এ ছাড়া ছুটিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের আর আসতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবার ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। ডিউটি ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কোথাও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় মসজিদের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ভেতরের দোকানেও সামাজিক দূরত্ব মেনে কেনাকাটা করতে বলা হয়েছে। সব ধরনের খেলাধুলাও বন্ধ।

 পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ডেমরার অস্থায়ী পুলিশ লাইনসে ১০০টি বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানায়ও কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আধুনিক সুবিধার চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই।’