নিষেধাজ্ঞা শেষ, দুই মাস পর ইলিশ শিকারে নদীতে নামছেন জেলেরা

নদীতে মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে উঠে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাত থেকে ইলিশ শিকারে মেঘনা ও পদ্মায় নামবেন চাঁদপুরের জেলেরা। জেলার প্রায় ৫২ হাজার জেলে জাল ও নৌকা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছেন।

জাটকা রক্ষায় ১মার্চ থেকে এই দুই নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। একই সময়ে মাছ পরিবহন, বিক্রি ও মজুতও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।

চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার হরিসভা এলাকার জেলে দীন ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের চাল দিয়েছে, তাই আমরা দুই মাস নদীতে নামিনি। এখন জাল নৌকা নিয়ে বসে আছি কখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।’ মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকার জেলে পবিত্র দাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনিসহ সব জেলেই খুশি। এখন থেকে নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরে সংসার চালাতে আর কষ্ট হবে না।

মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন বলছে, জাটকা রক্ষায় এই দুই মাস তারা নৌ পুলিশ,কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ৪৮৮টি অভিযান চালায়। জব্দ করা হয় প্রায় ১৭ মেট্রিক টন জাটকা ও ২৯৪ লাখ মিটার জাল। সেই সঙ্গে ৮৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭৫জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মামলা হয়েছে ৬২টি।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাখওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তবে জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী জুন পর্যন্ত।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, গত অক্টোবরে ইলিশের ডিম ছাড়ার হার ছিল প্রায় ৪৯ ভাগ, যা অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। এখন নদীতে যে পরিমাণে জাটকা রয়ে গেছে তা রক্ষা করতে হবে। সেটা সম্ভব হলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো যাবে।

এদিকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এক শ্রেণির জেলে পদ্মা–মেঘনায় মাছ শিকার অব্যাহত রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনের লোকজন করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকায় জাটকা রক্ষায় তেমন একটা নজর দিতে পারেননি।

এ প্রসেঙ্গ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, ‘এবার আমরা করোনার কারণে নদীতে আগের মতো অভিযান চালাতে পারিনি। এ জন্য জাটকা রক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু জেলার ৩৮ হাজার ৫ জন জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে টানা চার মাস চাল দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাঁরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে নামেননি।'