সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় এক ব্যক্তি তাঁর সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ধর্ষণের পর তাঁকে হত্যা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমাউল হুসনার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ওই ব্যক্তি এসব কথা বলেন। জবানবন্দি রেকর্ড করার পর আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরও সংসার করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাম-পরিচয় গোপন রেখে প্রথমে মুঠোফোনে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন ওই ব্যক্তি। এরপর দেখা করার কথা বলে গত সোমবার রাতে তাঁকে বাড়ির বাইরে ডেকে নেন তিনি। এ সময় সাবেক স্বামীকে চিনতে পেরে দ্রুত সেখান থেকে আসার জন্য বাড়ির দিকে পা বাড়ালে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে গামছা দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেলেন সাবেক স্বামী। এরপর ধর্ষণ করার পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যান তিনি।

পুলিশের ভাষ্যমতে, প্রায় ১০ বছর আগে ওই ব্যক্তির সঙ্গে নিহত নারীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ওই ব্যক্তি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তাঁদের সংসারে ৮ বছর বয়সের মেয়ে এবং ৬ বছরের ছেলে রয়েছে। দাম্পত্য কলহের জেরে চার মাস আগে ওই ব্যক্তিকে তালাক দেন ওই নারী। এরপর ওই নারী দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। ওই ব্যক্তি বগুড়া শহরে অটোরিকশা চালান এবং কলোনি এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। গত সোমবার গভীর রাতে কাউকে কিছু না বলে বাড়ির বাইরে যান ওই নারী। সকালে বাড়ির পাশের ধানখেত থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই নারীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে ওই নারীর শরীরে ধর্ষণের আলামত ছিল। তাঁর গলায় ওড়না প্যাঁচানো ছিল। ধর্ষণের পর হত্যা—এমন ধারণা থেকেই এই হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সনাতন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করা হয়। ওই নারীর মুঠোফোনের কলের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্প্রতি বগুড়া শহরের কলোনি এলাকার একটি মুঠোফোনের নম্বরে তাঁর নিয়মিত কথা হয়েছে। প্রথমে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কয়েক দিন আগে তাঁর মুঠোফোন হারিয়েছে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই মুঠোফোন নম্বর ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে বুধবার সকালে তাঁকে গাবতলী উপজেলা থেকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটক ব্যক্তিই ওই নারীর সাবেক স্বামী।

সনাতন চক্রবর্তী আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারীর স্বামী পুলিশকে জানান, তিনি ওই নারীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাননি। কিন্তু তাঁর সাবেক স্ত্রী তাঁকে তালাক দেন। তাই প্রতিশোধ নিতে নতুন একটি সিম কার্ড জোগাড় করে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। কয়েক দিন কথা বলার পর প্রেমের অভিনয় করে সোমবার রাত ১০টার দিকে দেখা করার কথা বলে তাঁকে বাড়ির বাইরে ডেকে আনেন। এরপর তিনি তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান সনাতন চক্রবর্তী।