নরসিংদীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীতে পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় স্থানীয় তিনজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে নরসিংদী শহর, মাধবদী ও মনোহরদীতে পুলিশের পৃথক অভিযানে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পলাশের ঘোড়াশাল ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলম পলাশ থানায় ওই তিন সাংবাদিককে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা না বলে তাঁর বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করার অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি।

গ্রেপ্তার তিন সাংবাদিক হলেন, স্থানীয় দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক রমজান আলী প্রামাণিক (৪৫), স্টাফ রিপোর্টার শান্ত বণিক (৩৫) ও অনলাইন পোর্টাল নরসিংদী প্রতিদিনের প্রকাশক ও সম্পাদক খন্দকার শাহিন (৩২)। রমজান আলী প্রামাণিকের বাড়ি নরসিংদী শহরে, শান্ত বণিকের বাড়ি মনোহরদীতে ও খন্দকার শাহিনের বাড়ি মাধবদীতে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রূপম কুমার সরকার জানান, দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে 'ঘোড়াশালে চুরির অপবাদে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পুলিশের' এবং নরসিংদী প্রতিদিন নামের একটি অনলাইনে 'ঘোড়াশাল ফাঁড়িতে নেওয়ার পর মৃত্যু, অভিযোগ পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন দুটিতে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলমের বরাত দিয়ে একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়। অথচ জহিরুল আলম এমন কোনো বক্তব্য দেননি এবং মুঠোফোনে বা সরাসরি ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগই হয়নি। তাঁর বরাত দিয়ে এমন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। তাই নিজের সম্মান বাঁচাতে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি মামলাটি করেন।

গত ২৯ এপ্রিল বুধবার বিকেলে নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশালে পুলিশের হেফাজত থেকে ফিরে যাওয়ার পর হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মান্নান (৪০) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, চলমান লকডাউনের সময় সিএনজি নিয়ে সড়কে বের হওয়ায় মান্নানকে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘোড়াশাল ফাঁড়ির পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। এতে ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় অটোরিকশা চালকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এই ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য ছিল, মান্নানের হৃদরোগ ছিল, তাঁকে সড়কে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ওই সিএনজি চালিয়ে পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের কালীগঞ্জের দক্ষিণ খলাপাড়া এলাকায় গিয়ে অসুস্থ হন। পরে সন্ধ্যার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর পায় পুলিশ।

মামলার বাদী ও ঘোড়াশাল ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল আলমের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পলাশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, জহিরুল আলমের সঙ্গে কথা না বলেই ভুল বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করায় তিনি বাদী হয়ে তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। মামলার প্রাথমিক তদন্তে ও উদ্ধারকৃত আলামতের ভিত্তিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।