চিকিৎসা না পেয়ে ভ্যানে সন্তান জন্মের অভিযোগ তদন্তে ২ কমিটি

নবজাতক ।  প্রতীকী ছবি
নবজাতক । প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের অজুহাতে সাতক্ষীরার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দেওয়ায় ভ্যানের ওপর সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগ তদন্তে আজ মঙ্গলবার দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ, অন্যটি প্রশাসন।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত বলেন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এহছান আরাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ওই নারীর বাড়িতে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তাদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

অভিযোগ করা হচ্ছে, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। হাসপাতাল চত্বরে তাঁকে বহনকারী ভ্যানের ওপরই সন্তান জন্ম দেন তিনি। তবে জরুরি বিভাগে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকের দাবি, ওই নারীকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে আনা হয়নি।

সাতক্ষীরা শহরের ঝুটিতলা এলাকার বাসিন্দা পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মেয়ে শিমুলী রানী দাসের প্রসবব্যথা শুরু হয়। শুক্রবার ভোরের দিকে মেয়েকে নিয়ে তিনি প্রথমে দুটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে বলে তাঁরা রোগী না দেখেই সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মেয়েকে নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছান। দেখেন জরুরি বিভাগে যে দুজন আছেন তাঁরা ঘুমাচ্ছেন। তিনি তাদের ডেকে তুলে মেয়ের প্রসবব্যথার কথা বলেন। ওই দুজন বাইরে না এসে রোগীকে জরুরি বিভাগের ভেতর নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, 'আমি বারবার তাদের বলেছি, আমার মেয়ের বসার ক্ষমতা নেই। একটু বাইরে এসে দেখেন। ঘণ্টাখানেক এভাবে অপেক্ষা করেছি। সঙ্গে থাকা ধাত্রী পরে ভ্যানের ওপর সন্তান প্রসবে সহায়তা করেন।'

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, করোনার কারণে সাধারণত জরুরি বিভাগের বাইরে গিয়ে রোগী দেখেন না চিকিৎসক ও ব্রাদাররা। রোগী এলে আগে তাদের রোগের ইতিহাস নেওয়া হয়। এ কারণে তাদের বারবার বলার পর জরুরি বিভাগের ভেতরে না আসার একপর্যায়ে সন্তান জন্ম দেন ওই নারী।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই সময় কর্তব্যরত ব্রাদার ওয়াজেদ আলী বলেন, শিমুলীর বাবার বাড়ি ও তাঁর বাড়ি একই এলাকায়। তাঁরা পরষ্পরের পরিচিত। শিমুলীকে জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি দিয়ে ভেতরে আনার জন্য লোক পাঠানো হয়। কিন্তু বারবার অনুরোধ করার পরও তিনি না আসায় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ভ্যানের ওপরই সন্তানের জন্ম হয়ে যায়।

ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক অসিম সরকার বলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কক্ষে তিনি ছিলেন। এ বিষয় তিনি কিছু জানেন না। জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে তিনি অবশ্যই জানতেন।