ভারত থেকে ফিরলেন আরও ১৩০ বাংলাদেশি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ফাইল ছবি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ভারতে লকডাউনে আটকে পড়া আরও ১৩০ বাংলাদেশি ঢাকায় ফিরেছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশের বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

আজ বিকেলে নয়াদিল্লি থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে দুই ধাপে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলো।

বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার জানান, ঢাকায় আসার পর বিমানবন্দরে এসব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, পরে তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

শুধু আকাশপথেই নয়, সড়কপথেও ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। লকডাউন শুরুর পর থেকে বিভিন্ন স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ মিশনগুলো পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আজ দিল্লি থেকে সড়কপথে ২৬ বাংলাদেশি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন।

দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন দূরবর্তী রাজ্য থেকে আগামী কয়েক দিনে সড়কপথে শতাধিক বাংলাদেশির দেশে ফেরার অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যাঁরা সড়কপথে ভারত থেকে দেশে ফিরতে চান, তাঁদের অবিলম্বে হাইকমিশনের ৩০ এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য হাইকমিশনে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সড়কপথে দীর্ঘভ্রমণের ক্ষেত্রে রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসকের অনুমতি নিতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আকাশপথে প্রত্যাবর্তনের তৃতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি ও চেন্নাই ছাড়াও বেঙ্গালুরু থেকে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য হাইকমিশনের প্রস্তাব দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা ও অনুমোদন পাওয়ার ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৪টি ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফ্লাইটগুলো কলকাতা থেকে ১০ মে বেলা আড়াইটায়, মুম্বাই থেকে ১২ মে বেলা আড়াইটায়, বেঙ্গালুরু থেকে ১৩ বা ১৫ মে বেলা আড়াইটায়, দিল্লি থেকে ১৪ মে বেলা আড়াইটায় ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা ও অনুমোদন পাওয়ার ভিত্তিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ৮, ৯, ১০ এবং ১৩ ও ১৪ মে চেন্নাই থেকে মোট পাঁচটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে এবং এর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আগ্রহী যাত্রীদের অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

সড়ক ও আকাশপথে ভ্রমণেচ্ছু প্রত্যেক যাত্রীর অবশ্যই কোভিড-১৯ মুক্ত বা কোভিড-১৯ উপসর্গমুক্ত সনদ থাকতে হবে। সব যাত্রীকে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এবং বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যেসব বাংলাদেশি আইনগত জটিলতায় পড়ে দেশে ফিরতে পারছেন না বা স্থানীয় সরকারের ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি নিয়ে হাইকমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ সেল বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করে সম্ভাব্য সব উপায়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এই পরিস্থিতিতে আটকে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দূতাবাসের গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সংগতি রেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্বাগতিক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাইকমিশন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে ২১ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ছাড়া সব দেশের আকাশপথে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে ৮ এপ্রিল থেকে আজ ৫ মে পর্যন্ত ভারত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, নেপাল, কাতার, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৩টি বিশেষ ফ্লাইটে করে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে আট শতাধিক যাত্রীকে স্বাস্থ্য সনদ না থাকায় রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্প ও ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। অন্য ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষ করে স্বাস্থ্য সনদ নিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে গেছেন। আজ পর্যন্ত হজ ক্যাম্পে ৮২ জন এবং ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে ৩২৬ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।