করোনায় ১৭ দেশে মারা গেছেন ৪৬৪ বাংলাদেশি

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ও মালদ্বীপে আরও চারজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এঁদের মধ্যে তিনজন যুক্তরাষ্ট্রে আর একজন মারা গেছেন মালদ্বীপে। করোনার সংক্রমণের পর থেকে এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে বাংলাদেশি কেউ প্রাণ হারালেন।

এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বের ১৭ দেশে ৪৬৪ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেলেন।
এঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৩৬ জন, যুক্তরাজ্যে ১২২ জন, সৌদি আরবে ৫৫ জন, ইতালিতে ও কুয়েতে ৮ জন করে, কানাডায় ৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ জন, ফ্রান্স ও স্পেনে ৫ জন করে, কাতারে ৪ জন, সুইডেনে ২ জন, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব আর কাতারের পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন কুয়েতে। আজ পর্যন্ত দেশটিতে ৮ জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৫২২ জন। তবে এক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের চেয়ে ৪টি ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা হাজার পাঁচেক বাংলাদেশির দুর্বিষহ জীবন প্রধান বিবেচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহে ওই ক্যাম্পগুলোতে অন্তত ৪জন বাংলাদেশি মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। তবে এঁরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন, এমনটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা ওই সব ক্যাম্পের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আজ কথা বলে জানা গেছে, খাবার ও দেশে ফেরার অনিশ্চয়তায় বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশি কর্মীরা মিসরের কর্মীদের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভে যোগ দেন। মিসরের কর্মীরা রোববার রাতে বিক্ষোভ করেন। মূলত ফিরতে না পেরে মিসরের কর্মীরা কুয়েতের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ বিক্ষোভ থামাতে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মিসরের কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে।
ইরাক সীমান্তবর্তী আবদালি ডিটেনশন ক্যাম্পে গত ১১ এপ্রিল থেকে অবস্থান করছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা, খাদ্যের অভাবের পাশাপাশি কুয়েতের কর্তৃপক্ষ সেভাবে আমাদের দেখাশোনা করছে না। তা ছাড়া গত শনিবার শিবিরের একজন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এ বিষয়গুলো লোকজনকে সংক্ষুব্ধ করে তুলছে। অন্য তিন শিবিরেও একই পরিস্থিতি বলে শুনেছি। এই অবস্থায় বিক্ষুব্ধ কয়েকজন বাংলাদেশি রোববার রাতে মিসরের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ভাঙচুরে যোগ দেন বলে জেনেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মী অভিযোগ করেন, ১১ এপ্রিল তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে আসার সময় সবাইকে ১৩ এপ্রিল ঢাকায় পাঠানো হবে বলা হয়। অথচ ২৫ দিন চলে গেছে ফ্লাইটের কোনো নামগন্ধ নেই।
অন্য আরেক কর্মী প্রশ্ন তোলেন, ‘কী অপরাধ আমাদের? এত কষ্ট করে দেশে টাকাপয়সা পাঠাই, বাংলাদেশে কি আমাদের কোনো অধিকার নেই? করোনার আর দরকার হবে না, আমরা এমনিতেই মারা যাব।’
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, চারটি ডিটেনশন ক্যাম্পে বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য রাখা হয়েছে।
কুয়েতের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পে থাকা আমাদের লোকজন এখন পর্যন্ত খুবই সুশৃঙ্খলই ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন ক্যাম্পে থেকে এরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মিসরের লোকজনের সঙ্গে বিক্ষোভে গেছে বলে শুনেছি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, কুয়েত একতরফাভাবে বিভিন্ন দেশের লোকজনকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। আর ফ্লাইটের বিষয়টিও তাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে আমাদের এখানে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। যদিও আমরা সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইটে লোকজনকে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলাম।’