দেশে মোট করোনা রোগীর অর্ধেকই শনাক্ত ৯ দিনে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর অর্ধেকই শনাক্ত হয়েছেন গত ৯ দিনে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৭৮৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত দাঁড়াল ১০ হাজার ৯২৯।

 দেশে প্রথম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের খবর জানানো হয় ৮ মার্চ। এখন দেশে সংক্রমণের নবম সপ্তাহ চলছে। রোগী বাড়তে শুরু করে মূলত ষষ্ঠ সপ্তাহের শেষ ও সপ্তম সপ্তাহের শুরু থেকে। বিশ্বে যেসব দেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষে, সেগুলোতেও দেখা গেছে মূলত সপ্তম সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এরপর প্রতি সপ্তাহে সেটা অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে টানা কয়েক সপ্তাহ। বাংলাদেশেও গত দুই সপ্তাহে রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। তবে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রোগী শনাক্তের পরীক্ষা অনেক কম হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হালনাগাদ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এ​ই ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মারা গেলেন ১৮৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৯৩ জন। এ নিয়ে মোট ১ হাজার ৪০৩ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষার পরিধি ও আওতা বাড়ানোর পর থেকেই রোগী শনাক্ত বাড়ছে। শুরুতে শুধু রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পরীক্ষা সীমিত ছিল। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯ এপ্রিল প্রথম এক দিনে ১০০-এর বেশি রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয়। এর পরের দুই দিন ১০০-এর কম ছিল। ১২ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন রোগী শনাক্তে তিন অঙ্কের ঘরে থাকছে।

৮ দিন ধরে প্রতিদিন ৫০০-এর বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তিন দিন ধরে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২৭ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ৯ দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ৫ হাজার ৫১৩ জন, যা মোট শনাক্তের ৫০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২৭ এপ্রিল থেকে রোগী শনাক্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯৭, ৫৪৯, ৬৪১, ৫৬৪, ৫৭১, ৫৫২, ৬৬৫, ৬৮৮ ও ৭৮৬।

দেশে সংক্রমণের সপ্তম সপ্তাহ শুরু হয় ১৯ এপ্রিল থেকে। ওই দিন পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্ত ছিলেন ২ হাজার ৪৫৬ জন। ১৮ এপ্রিল থেকে এক দিনে শনাক্ত ৩০০-এর ওপরে চলে যায়। সংক্রমণের সপ্তম সপ্তাহ শেষে গত ২৬ এপ্রিল দেশে মোট রোগী আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৯৮। আর অষ্টম সপ্তাহ শেষে, ৩ মে সেটা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৫৫ জনে। নবম সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে গতকাল ও আগের দিন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬৮৮ ও ৭৮৬ জন।

অন্য দেশের সংক্রমণের ধারার সঙ্গে মিল

বিশ্বে আক্রান্তের দিক থেকে যেসব দেশ শীর্ষে, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সংক্রমণের এই ধারার মিল পাওয়া যায়। তবে একই সময়ে ওই সব দেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল এবং সপ্তম থেকে অষ্টম সপ্তাহের মধ্যে ৭ দিনের ব্যবধানে প্রায় তিন গুণ করে রোগী বেড়েছিল। অবশ্য ওই সব দেশে বাংলাদেশের তুলনায় পরীক্ষাও হয়েছে অনেক বেশি।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে সংক্রমণের সপ্তম সপ্তাহ শেষে আক্রান্ত ছিল মোট ১ হাজার ২২৬ জন। অষ্টম সপ্তাহ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১৯ জনে। ইতালিতে সপ্তম সপ্তাহ শেষে আক্রান্ত ছিল ৩৫ হাজার ৭১৩ জন। অষ্টম সপ্তাহ শেষে প্রায় দ্বিগুণ হয়। যুক্তরাজ্যে সপ্তম সপ্তাহ শেষে মোট আক্রান্ত ছিল ৩ হাজার ৯৮৩ জন। অষ্টম সপ্তাহ শেষে সেটা দাঁড়ায় প্রায় তিন গুণ, ১১ হাজার ৬৬২ জন। ফ্রান্সে সপ্তম সপ্তাহ শেষে মোট আক্রান্ত ছিল ৩ হাজার ৬৪০ জন। অষ্টম সপ্তাহ শেষে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৪৭৫ জনে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯২ হাজার ৭২২ জনের। পজিটিভ (সংক্রমিত) নমুনা পাওয়ার হার ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বিশ্বের সব দেশের করোনাভাইরাসের তথ্য হালনাগাদ করে ওয়ার্ল্ডোমিটার্স নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পজিটিভ পাওয়ার হার ১৬ শতাংশ। ইতালিতে ২১ লাখ ৯১ হাজার ৪০৩টি নমুনার মধ্যে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া জার্মানিতে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।

দেশে আরও একজনের মৃত্যু

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুরুষ, তাঁর বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চিকিৎসকের মৃত্যুর পর পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।

বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ জনকে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন রাখা) নেওয়া হয়েছে। এখন মোট ১ হাজার ৬৯৪ জন আইসোলেশনে আছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৭৭ জনকে। এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন মোট ৪১ হাজার ১২২ জন।