চিকিৎসকদের খাবার পৌঁছে দেন নাজমুস সাকিব

প্রতিদিন চিকিৎসকদের কাছে খবার পৌঁছে দেন নাজমুস সাকিব। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন চিকিৎসকদের কাছে খবার পৌঁছে দেন নাজমুস সাকিব। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বিস্তারে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। হাসপাতালেই দিন রাত কাটাতে হচ্ছে। পরিবার থেকে দূরে থাকা এই মানুষগুলোর কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মোসাম্মৎ নাজমুস সাকিব। তিনি বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এ কাজ একটানা করছেন ২৪ মার্চ থেকে।

বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আয়েশা হোসেন। তিনি প্রতিদিন ফোনে (০১৭০১৬১৮০৮০) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে খাবারের অর্ডার নেন। আয়েশা জানালেন, রমজানে চিকিৎসক ও স্বাস্ত্যকর্মীদের ইফতার দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে। এই খাবারের স্পন্সর করছে হালদা ভ্যালি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর সাহরী আর কেউ যদি দুপুরে খেতে চান সে খাবার তৈরি করে দিচ্ছে মাদল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ খাবারের জন্য চিকিৎসকদের ৮০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। অনেক চিকিৎসক এ খাবারের জন্য সহায়তা করছেন। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস নামের চিকিৎসকদের একটি সংগঠন বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।

আয়েশা বললেন,'সরকারের পাশাপাশি আমরাও চিকিৎসকদের পাশে থাকতে চেয়েছি। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রাজধানীতে একা থাকছেন। তাঁরা হাসপাতালে ডিউটি শেষ করে আমাদের কাছ থেকে খাবারটা নিয়ে বাসায় ফিরছেন। আবার অনেকে হাসপাতালের খাবার খেতে পারেন না, তাঁরাও অর্ডার করছেন। আর স্বেচ্ছাসেবক নাজমুস সাকিব খাবারগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি খাবার প্রস্তুত করার পর প্যাকেট করা থেকে শুরু করে সার্বিক কাজটির তত্ত্বাবধান করছেন।'

রাতে মুঠোফোনে কথা বলার সময় নাজমুস সাকিব বললেন,' আমি প্রতিদিন দুপুরের আগেই বাসা থেকে বের হই। আর আমি এখনো বাসায় ফিরতে পারিনি। আরও কয়েকটা অর্ডার পৌঁছে দিয়ে তবেই বাড়ি ফিরতে পারব। প্রতিদিন রাত ১০ টা থেকে সাড়ে ১০টা বেজে যায়। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পথে যানবাহন ও মানুষ কম থাকায় বাড্ডা, মহাখালী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ঠিক সময়ে খাবারগুলো পৌঁছে দিতে পারছি।'

নাজমুস সাকিব জানালেন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে তিন বছর কাজ করেছেন। বর্তমানে একটি কোম্পানিতে কাজ পেয়ে তাঁর মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই শুরু হলো করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। লকডাউনের কারণে তিনি আর মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তবে ঘরে বসে থাকতে চাননি। হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাজে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকেরা সহায়তা করেন তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে খাবারটা তিনি নিজে তুলে দেন।

মোসাম্মাৎ নাজমুস সাকিব।
মোসাম্মাৎ নাজমুস সাকিব।

বাগেরহাটের মেয়ে নাজমুস সাকিব। বাবা শিক্ষকতা করেন। মা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কর্মরত। এক ভাই পড়াশোনা করছেন। রাত বিরেতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজটিতে পরিবারের সদস্যরা আপত্তি করছেন কি না জানতে চাইলে নাজমুস সাকিব হাসতে হাসতেই বললেন,' আমি ছোট বেলা থেকেই একটু অন্যরকম। আর আমার পরিবার আমার কাজে বাধা দেওয়া বা আপত্তি করে না। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়, আবার ফিরেও কথা হয়।'

অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন খাবার নিয়ে বের হন পথে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে জানতে চান কোথায় যাচ্ছেন নাজমুস সাকিব। তবে সব শোনার পর পুলিশ বা অন্য সদস্যরা কখনোই হয়রানি করেননি বলে জানালেন।

কুয়েত–বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে কাজটি শুরু করেছিলেন ২৮ বছর বয়সী নাজমুস সাকিব। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। বললেন, 'কোনো চিকিৎসক ওটিতে বা ব্যস্ত থাকলে ফোনে জানিয়ে দেন খাবারটা কোন রুমে রেখে আসতে হবে, সে অনুযায়ী রেখে আসি। অন্যরা সরাসরি আমার হাত থেকেই নিচ্ছেন। এই সময়ে সুরক্ষার জন্য যতটুকু প্রস্তুতি নেওয়া যায় তা চেষ্টা করি। আমার অ্যালার্জির সমস্যা থাকায় হাতে গ্লাভস পরতে পারি না। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত সব সময় জীবাণুমুক্ত রাখি। আর করোনার ভয়ে বসে থেকে লাভ নেই। খাবার হাতে নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে হাসি দেন তা দেখার জন্যও কাজটা করতে আনন্দ পাই। যতদিন সম্ভব কাজটা করতে চাই।'