কারাগারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ফাইল ছবি
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ফাইল ছবি

কারাগারে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে। গত মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীসহ ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২। এই পরিস্থিতিতে দুই সপ্তাহ আগে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আর আক্রান্ত ২২ বন্দী ও কারারক্ষী এখন তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক বন্দী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হন। তাঁর পাহারায় থাকা ১১ কারারক্ষীর করোনা শনাক্ত হয়। পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন বন্দী ও ৯ জন কারারক্ষী আক্রান্ত হন। তাঁরা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর মেটার্নিটি ও ঢাকার অদূরের কেরানীগঞ্জের জিনজিরার ২০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কারা অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিজন) মো. মনজুর হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দুই সপ্তাহ আগে দেশের ৬৮ কারাগারের বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কারাগারের নির্ধারিত মুঠোফোন নম্বরে প্রত্যেক বন্দীকে স্বজনদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব কারাগারে দর্শনার্থী সাক্ষাৎ বন্ধ রাখা হবে। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে সব কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ৬৮ কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ড ও সেলে প্রতিদিন জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজনে বন্দীদের মাস্ক পরানো হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে বন্দীদের সংখ্যা কমে গেছে। গতকাল পর্যন্ত ৬৮ কারাগারে বন্দী ছিলেন ৮৮ হাজার ৭৫৪ জন। প্রতিটি কারাগারে আসা নতুন বন্দীদের জন্য ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সব কারাগারে কিছু ওয়ার্ড ও সেল খালি করে কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন ৭৬ জন বন্দী ও কারারক্ষী কোয়ারেন্টিনে আছেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার প্রায় এক মাস পর বন্দীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তা ছাড়া যেসব কারারক্ষী আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে থাকেন। তারপরও কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সব ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যুর পর সরকার বন্দী ও কারারক্ষীদের জন্য আইসোলেশন কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কারাগারগুলোর বন্দীদের জন্য কিশোরগঞ্জের পুরোনো কারাগার, সিলেট বিভাগের বন্দীদের জন্য সিলেটের পুরোনো কারাগার, চট্টগ্রাম বিভাগের বন্দীদের ফেনীর পুরোনো কারাগার, বরিশাল বিভাগ ও যশোরের জন্য পিরোজপুরের পুরোনো কারাগার, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বন্দীদের জন্য মাদারীপুরের পুরোনো কারাগার, রংপুর বিভাগের বন্দীদের জন্য দিনাজপুরের পুরোনো কারাগার, রাজশাহী বিভাগের বন্দীদের জন্য কারা উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি প্রিজন রাজশাহী) বাংলোকে আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সর্বশেষ কেরানীগঞ্জের মহিলা কারাগারকে আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়।