আইসোলেশনে থাকা রোগীকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন বাড়িওয়ালা

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন বাড়িওয়ালা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁকে আবার বাসায় তুলে দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন বাড়িওয়ালা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁকে আবার বাসায় তুলে দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আইসোলেশনে থাকা এক রোগীকে গভীর রাতে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। পরে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তাকে আবার বাসায় তুলে দেওয়া হয়। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রূপসী বাগবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটৈ।

করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর মামা সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা উপজেলার রূপসী বাগবাড়ি এলাকায় এক বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত দুদিন আগে তাঁর ভাগ্নের জ্বর অনুভব হয়। তাঁরা নিজ উদ্যোগে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নমুনা দিলে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর ভাগ্নের করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাঁকে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়।

কিন্তু ওই বাড়ির মালিক ও এলাকার লোকজন বুধবার রাত ১১টার দিকে সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর করোনা আক্রান্ত ভাগ্নেসহ পরিবারকে বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যেতে না চাইলে তাদেরকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ভাগ্নেকে রূপগঞ্জে পলিটেকনিকে ভর্তি করানোর জন্য ময়মনসিংহের বাড়ি থেকে রূপগঞ্জে এনেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সে ভর্তি হতে পারেনি। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদেরকে বের করে দেওয়া হলে আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগী যাদের কোন উপসর্গ বা সমস্যা নেই তাঁরা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকবেন। এখানে কোনো বাড়িওয়ালা চাপ দিয়ে ভাড়াটিয়াকে বের করে দিলে সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, স্যার (স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী) চেয়েছিলেন ওই রোগী বাড়িতে নয, হাসপাতালে থাকুক। আমি স্যারকে মুঠোফোনে জানিয়েছে এত রাতে তাকে বের করে আনবো। হাসপাতালে শয্যাও প্রস্তুত নয়। পরে স্যার ওই রোগীকে বাড়িতে রাখতে রাজি হয়েছেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাংসদ বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের বাড়ি ওই এলাকায়। তিনি চান না ওই এলাকায় কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী থাকুক। তাই তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভালোবেসে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখতে চান। তিনি সেটাই করতে চেয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর কোনো উপসর্গ নেই। তাঁকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু রাতে তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে বাড়িওয়ালা ও এলাকার লোকজন বের করে দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এটা করা ঠিক হবে না। কারণ সব রোগীকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখতে পারব না। তিনি বলেন, জেলায় করোনা আক্রান্ত ৫ শতাধিক রোগী বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রোগী ও তাঁর স্বজন ওই বাড়িতে আইসোলেশনে থাকবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।