সাগরে ভাসা আরও ২৮০ রোহিঙ্গার জায়গা ভাসানচরে

তিন সপ্তাহের বেশি সময় গভীর সমুদ্রে ভাসতে থাকা আরও ২৮০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের পর আজ বৃহস্পতিবার ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে সাগরে ভাসা তিনশরও বেশি রোহিঙ্গাকে পাঠানো হল নোয়াখালীতে জেগে ওঠা চরটিতে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রওনা হওয়া আড়াইশ রোহিঙ্গা বোঝাই একটি ট্রলার গত বুধবার নৌবাহিনী আটক করে। এরপর আজ দিনের প্রথম ভাগে রোহিঙ্গারা যাত্রা করে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে।

আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজারের স্থানীয় সরকারী সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মানবপাচারকারীদের কবলে পড়া আড়াইশ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, সব শেষ কতজনকে উদ্ধা হয়েছে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি। তবে গত শনিবার যেমন ২৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারের পর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে, সব শেষ যাদের উদ্ধার করা হয়েছে এদেরও ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে। আমরা নতুন করে আর রোহিঙ্গাদের নেব না। তবে সাগরে কেউ না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে এটাও আমরা হতে দিতে পারিনা।

প্রসঙ্গত মানবপাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে শ' পাঁচেক রোহিঙ্গা দুটি ট্রলারে করে মাস দেড়েক আগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রাখাইন রাজ্য থেকে রওনা দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়া পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া ওই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেও ভিড়তে ব্যর্থ হয়। পরে এর তিন সপ্তাহর বেশি সময় ধরে ট্রলার দুটি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে। বুধবার যে ট্রলারটি নৌবাহিনী আটক করেছে সেটি কি বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা ট্রলার নাকি আন্দামানে ঘুরে বেড়ানো ট্রলার সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় আটক ২৮০ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুপুরে ভাসানচরে যাত্রা করেছেন।

কক্সবাজারের সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলার দুটি মালয়েশিয়ার উপকূলে ভিড়তে ব্যর্থ হওয়ার পর মানবপাচারকারীরা ২৩ এপ্রিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে টেকনাফের বাহারছড়া দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে ঢুকে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপকূলে আসতে দেয়নি। পরে ট্রলার থেকে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ৪১ জন রোহিঙ্গা মে মাসের ২ তারিখ কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া প্যারাবনে ভিড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৯ জনকে উদ্ধার করে। বাকী ১২জন পালিয়ে যায়। উদ্ধারকৃত ২৮ রোহিঙ্গা এবং এক মানবপাচারকারীকে পরে কোষ্ট গার্ড ভাসানচরে নিয়ে যায়।

দুই ট্রলারে থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশলেতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে চিঠি লিখেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জলসীমায় নেই। তাই এদের নেওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের নেই। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রয়োজনে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো দায়িত্ব নিক।

পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক যৌথ বিবৃতিতে ও ইউএনএইচসিআর, আইওএম এবং ইউএনডিওসি এক যৌথ বিবৃতিতে সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।

প্রসঙ্গত বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে সরকার মিয়ানমারের এক লাখ সংখ্যালঘু মুসলমানদের সরানোর জন্য বেছে নেয় ভাসানচরকে। বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা ওই চরে সরকারের ওই উদ্যোগে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মহল শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত বিরোধীতা করে আসছে। যদিও ভাসানচরকে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসযোগ্য করতে জাতিসংঘের কোন কোন সংস্থা বাংলাদেশকে সহায়তাও করেছে। অবশ্য রোহিঙ্গারাও এখন পর্যন্ত ভাসানচরে যেতে রাজি নয়। তাই ভাসানচরে বেড়িবাধ নির্মাণ, ঘরবাড়ি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ অবকাঠামো উন্নয়ন শেষ করেও রোহিঙ্গাদের পাঠানো যায়নি। অবশ্য জাতিসংঘ সব শেষে জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার আগে কারিগরি মূল্যায়ন শেষ করে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামত নিতে হবে।