নরসিংদীতে করোনা সংক্রমণ কমছে, তবে ব্যবসা চালুর পর শঙ্কা

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

নরসিংদীতে দুই সপ্তাহ থেকে করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। গত এক মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৬১ জন রোগী শনাক্ত হলেও পরের ১৫ দিনে শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ২১ জন। তবে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মানুষ কোনো শর্তই তেমন মানছে না।

বর্তমানে সংক্রমণ কমলেও রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের পরেই নরসিংদীর অবস্থান। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক মাসে এ জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮২।

গত ৭ এপ্রিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় জেলার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ জেলাকে করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রথম থেকেই। এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেলেও গত এক মাসে ১১০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আক্রান্তদের বড় অংশই স্বাস্থ্যকর্মী।

এদিকে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট। ঈদ সামনে রেখে ও জেলার অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে হাটটি খুলে দেয় জেলা প্রশাসন। আগে সপ্তাহে তিন দিন হাট চালু ছিল। এখন প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন বলছে, শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে শেখেরচর-বাবুরহাট। শর্ত হলো, হাটের কোনো দোকান খোলা রাখা যাবে না। অনলাইন বা মুঠোফোনে অর্ডার পেলে শুধু একটি শাটার খোলা রেখে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে এবং সকল প্রকার লেনদেন অনলাইন অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করতে হবে। বেচাকেনার জন্য কোনো দোকান বা আড়তে জনসমাগম করা যাবে না এবং প্রতিটি দোকান বা আড়তে সর্বোচ্চ তিনজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করতে পারবেন। হাটে আসা-যাওয়ার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি সুনির্দিষ্ট প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর যানবাহন রেখে মালামাল ওঠানো-নামানো যাবে না। নির্দিষ্ট স্থান ধূমকেতু মাঠ ব্যবহার করতে হবে।

তবে সরেজমিনে ওই হাটে গিয়ে দেখা গেছে, এসব শর্তের অধিকাংশই মানা হচ্ছে না। হাটের ৭০ শতাংশ দোকানে আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা নগদ টাকায় কাপড় কিনছেন। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ক্রেতারা মুঠোফোনে কাপড়ের অর্ডার দিচ্ছেন এবং সে অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এই হাটের বেশির ভাগ ক্রেতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব শর্ত আক্ষরিক অর্থে মেনে চলা যাচ্ছে না।

চাঁদপুর থেকে হাটে কাপড় কিনতে আসা এমরান হোসেন জানান, লকডাউনের কারণে অনেক কষ্ট করে তিনি এখানে এসেছেন। যে পরিমাণ কাপড় কেনা দরকার ছিল, তা পারছেন না পরিবহন সংকটের কারণে। ঝুঁকি নিয়ে এখানে আসার একটাই কারণ, ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে বাঁচবেন কীভাবে।

কুষ্টিয়া থেকে আসা সাদির মিয়া নামের একজন জানান, গত বছরও ঈদের আগে এই হাট থেকে ১০ লাখ টাকার কাপড় কিনে নিয়ে এলাকায় বিক্রি করেছেন। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে গাড়ি-ঘোড়া ও দোকানপাট বন্ধ, লোকজনও বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তবু ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছেন, অল্প করে কাপড়ও কিনেছেন।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকা চালু রাখতেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেখেরচর-বাবুরহাটের কার্যক্রম শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সেখানকার ক্রেতা–বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন এবং তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টিও শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ও কার্যকর উদ্যোগগুলোর কারণে এ জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমছে বলে আমার ধারণা। তবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন লকডাউন উঠে যেতে শুরু করেছে। অতএব খোলা পৃথিবীতে এখন সতর্ক হয়েই আমাদের বাঁচতে হবে।’