আশুলিয়া ও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ

চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ার ডিইপিজেডের এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিকেরা শনিবার বিক্ষোভ করেন। ছবি: সংগৃহীত
চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার আশুলিয়ার ডিইপিজেডের এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিকেরা শনিবার বিক্ষোভ করেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার আশুলিয়ায় বকেয়া ও শত ভাগ বেতনের দাবিতে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা আজ শনিবার বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানা ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা করে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গাজীপুরের জিরানী এলাকার ডরিন গ্রুপের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা শত ভাগ বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল শুক্রবার শত ভাগ বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করলে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল সাতটার দিকে জিরানী এলাকার ডরিন গ্রুপের কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা এপ্রিল মাসের শত ভাগ বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা করে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর তাঁরা পাশের আশুলিয়া এলাকার কয়েকটি কারখানার বাইরে থেকে হামলা করে ভাঙচুর করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার কয়েকটি কারখানা ও জামগড়ার ছয়তলা এলাকার এনভয় গ্রুপ, এএম ডিজাইনসহ আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকেরা বের হয়ে আসেন। এরপর তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিলে শ্রমিকেরা পাল্টা ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলে শ্রমিকেরা চলে যান।

শ্রমিকেরা বলেন, সরকার তাঁদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে। কারখানার মালিকদের ৩৫ শতাংশ দিয়ে তাঁদের শত ভাগ বেতন পরিশোধ করতে হবে। কারখানার মালিকদের তা দেওয়ার সামর্থ্য আছে। মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

এনভয় গ্রুপের মালিক ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, শনিবার সকালে তাঁর কারখানার আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বের হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাঁর কারখানায় বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি ভাঙচুর করেন। এ অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর বেশ কিছু শ্রমিক পুনরায় কাজে যোগ দেন।

এদিকে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) এ ওয়ান বিডি লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে শনিবার ১১বারের মতো রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এসব শ্রমিক গত জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। সকাল ১০টার দিকে এ ওয়ানের শ্রমিকেরা ডিইপিজেডের সামনে থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল করে তাঁরা ওই সড়কের বাইপাইল স্ট্যান্ডে গিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানান। পরে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল করে পুনরায় ডিইপিজেডে গিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধার কারণে তাঁরা আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।

শ্রমিকেরা বলেন, চার মাস ধরে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না পেয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিরুপায় হয়ে তাঁরা বারবার বিক্ষোভ করছেন। এরপরও তাঁদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না।

পোশাক কারখানার একজন মালিক বলেন, একটি চক্র করোনাভাইরাসের অজুহাতে ঈদ সামনে রেখে শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। নানা অজুহাতে তাঁরা কাজ না করে বিক্ষোভ করছেন।

শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার সানা শামীনুর রহমান বলেন, বকেয়া ও শত ভাগ বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা শনিবার বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা কারখানা থেকে বের হয়ে সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করেন। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।