তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করা যাবে, অধ্যাদেশ জারি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতেও সাধারণ ছুটি চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ নামের ওই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করা যাবে।

এর আগে ৭ মে ওই অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আজ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই অধ্যাদেশ জারি করেন। অধ্যাদেশে আদালত বলতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগসহ সব অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বোঝানো হয়েছে। ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি বলতে অডিও-ভিডিও বা অনুরূপ অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির আদালতের বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় উপস্থিত থাকা বা অংশগ্রহণ বোঝানো হয়েছে।
অধ্যাদেশের শুরুর ভাষ্য, যেহেতু মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদানকালে পক্ষগণের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। যেহেতু সংসদ অধিবেশন নাই এবং রাষ্ট্রপতির কাছে উহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান আছে।
অধ্যাদেশ বিধান অনুসারে আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতো হাইকোর্ট বিভাগ সময়ে সময়ে এ বিষয়ে প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে। অধ্যাদেশে বলা হয়, জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে। অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো ব্যক্তির ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতি বাধ্যবাধকতার শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

এর আগে ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী আদালতে মামলার পক্ষ বা তাদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীদের এবং সাক্ষীদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ মহামারি রোধকল্পে মাসেরও বেশি সময় ধরে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আদালতসহ সরকারি, বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মানুষের সমাগম হয় এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিচার কার্যক্রম করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এর আগে ২৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বলে সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।