ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ওঁরা ৭ জন

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পোমাংপাড়া গ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে বেতনের টাকায় ত্রাণসামগ্রী ও নগদ টাকা তুলে দিচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরা। গত শুক্রবার সকালে।  ছবি: প্রথম আলো
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পোমাংপাড়া গ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে বেতনের টাকায় ত্রাণসামগ্রী ও নগদ টাকা তুলে দিচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরা। গত শুক্রবার সকালে। ছবি: প্রথম আলো

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ওঁরা সাতজন। কেউ শিক্ষক, কেউ পুলিশ কর্মকর্তা, কেউ সেনাসদস্য, আবার কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাকুরে।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পোমাংপাড়া গ্রামের এই সাতজন দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত আছেন। কিন্তু তাঁদের মন পড়ে আছে নিজের গ্রামে। করোনাভাইরাসের এই সময়ে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। নিজেদের বেতনের টাকায় ফান্ড গঠন করে ত্রাণ দিচ্ছেন তিন গ্রামের দরিদ্র মানুষকে।

লক্ষ্মীছড়ির জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরার উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে এই তহবিল। তিনিই সবার মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উদ্যোগ নেন।

কার্তিক ত্রিপুরা বলেন, ‘সাতজনের মধ্যে কেউই তেমন বড় চাকুরে নেই। তবু সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

গত শুক্রবার সকালে উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পোমাংপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ভিটায় ত্রাণ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে রয়েছে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক লিটার সয়াবিন তেল ও একটি সাবান। এরপর সামাজিক দূরত্ব মেনে ৭২ জন দরিদ্র মানুষের হাতে এসব ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরা করোনা সংকটকালে মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তিনি ত্রাণের পাশাপাশি তরকারি কেনার জন্য প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে দেন।

>

বেতনের টাকায় তহবিল গঠন করে ত্রাণ দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত দীঘিনালার একটি গ্রামের সাতজন।

পোমাংপাড়া গ্রামের চেনজাকতি ত্রিপুরা (৫০), খুল কুমার ত্রিপুরা (৬০) ও পূর্ণমোহন ত্রিপুরা (৬২) জানান, গ্রামের সন্তানেরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণ ও নগদ টাকা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। এতে তাঁরা খুশি।

মেম্বার পাড়া গ্রামের চিরসচি ত্রিপুরা (৬৫) ও শক্তিসেন চাকমা (৬৬) জানান, তাঁরা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনা সংকটে তাঁরা ভিক্ষা করতে পারেন না। শিক্ষক কার্তিক ত্রিপুরা বাড়িতে এসে দুজনকে এক হাজার টাকা দিয়ে গেছেন।

কার্তিক ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা পোমাংপাড়া গ্রামের সাতজন শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছি। আমরা তো মাস শেষে বেতন পাই। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো খুব অসহায়। তাই আমরা চাকরিজীবীরা ফান্ড গঠন করে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছি।’

এ ছাড়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে দুর্গম শিবছড়িতে বসবাসরত ৪০টি পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।