বিষ মিশিয়ে বানর হত্যা, নারী কারাগারে

মাদারীপুরে বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মারা যাওয়া বানরের মরদেহগুলো সারিবদ্ধভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে মরদেহগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরে বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মারা যাওয়া বানরের মরদেহগুলো সারিবদ্ধভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে মরদেহগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে খাবারে বিষ মিশিয়ে বানর হত্যার অভিযোগে শাহানাজ বেগম (৫৫) নামের এক নারীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার বিকেলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইদুর রহমান তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শাহানাজ মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যখাগদী এলাকার লতু হাওলাদারের স্ত্রী।

এর আগে সকালে শহরের মধ্যখাগদী এলাকা থেকে শাহানাজ ও তাঁর দেবর আকু হাওলাদারকে আটক করে পুলিশ। পরে আকুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যখাগদী এলাকায় নিষ্ঠুর মানবের দেওয়া বিষ মেশানো খাবার খেয়ে ১৫টি বানরের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এই বানরগুলোকে মধ্যখাগদী এলাকার একটি খালপাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পরে মৃত পাঁচটি বানরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য তা ঢাকায় পাঠায় জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘খাবারের খোঁজে আসা বানরগুলোকে মারা হলো নিষ্ঠুরভাবে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বৃহস্পতিবার বন বিভাগ সদর মডেল থানায় ফৌজদারি এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে আলাদা দুটি মামলা করে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। এরপর থেকেই পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে বানর হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে তদন্ত শুরু করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর মধ্যখাগদী থেকে শাহানাজ ও তাঁর দেবর আকুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে শাহানাজ তাঁর অপরাধ স্বীকার করেন।

গ্রেপ্তার শাহানাজ বেগম।
গ্রেপ্তার শাহানাজ বেগম।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বদরুল আলম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুজনকে আটক করলেও একজন প্রকৃত অপরাধী। তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বানরকে ওই দিন খাবার খাওয়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি এর আগেও খাবারে বিষ দিয়ে আরও সাত-আটটি বানর মেরে ফেলেন বলেও জানা গেছে। তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলেও আমরা সন্দেহ করছি। খাবারে বিষ কোথা থেকে এল, সে বিষয়ও খুঁজে বের করা হচ্ছে।’

এদিকে খাবারে বিষ দিয়ে বানর হত্যার পরে থেকে এই এলাকায় বানরের উপস্থিতি একদমই নেই। বানরগুলো ভয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। করোনার প্রভাবে এলাকাগুলোতে বানরের খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

মধ্যখাগদী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সুমন তালুকদার বলেন, ‘বানরগুলো আমাদের সম্পদ। যারা এ সম্পদ হত্যা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। পাশাপাশি বানরের জন্য সরকারিভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’

আরও পড়ুন: