খাওয়ার জন্য পাঁঠা না দেওয়ায় কর্মকর্তাকে আ.লীগ নেতার মারধর

সিলেটে খাওয়ার জন্য সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামার থেকে পাঁঠা না দেওয়ায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা এবং তাঁর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের ফোন করলে একজনের ফোন বন্ধ এবং অপরজন ফোন কেটে দিয়েছেন।

আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ ওঠা ব্যক্তি রঞ্জিত সরকার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং কনক পাল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক।

হামলায় আহত সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফুল ইসলাম সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেলা দুইটার দিকে কনক পাল নামের এক তরুণ নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় ওই তরুণ খাওয়ার জন্য ছাগল উন্নয়ন খামারের পাঁঠা দেওয়ার জন্য উপপরিচালককে চাপাচাপি করেন। এতে অপারগতা প্রকাশ করলে কনক পাল কর্মকর্তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফুল ইসলামসহ অন্যরা এমন আচরণের প্রতিবাদ জানালে কনক পাল মুঠোফোনে ছাত্রলীগের অন্য নেতা-কর্মীদের খবর দেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকারসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ওপর চড়াও হন। এ সময় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কাজী আশরাফুল ইসলামকে মারধর করে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সিলেট প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ছাগল উন্নয়ন খামারে খামারিদের সহযোগিতার জন্য পাঁঠা পালন করা হয়। প্রজননের জন্য পাঁঠাগুলো সরকারিভাবে খামারিদের কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে খামারির বাড়িতে চারটি ছাগল থাকতে হবে। পাঁঠাগুলো ক্রয় করতে কিছু নীতিমালা রয়েছে। এ জন্য খামারি প্রথমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে আবেদন করবেন, পরে জেলা কর্মকর্তার কাছে আবেদনগুলো জমা হবে। পরে বিভাগীয় উপপরিচালক সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুমোদন করবেন।

হামলার শিকার কাজী আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় এক তরুণ নিজেকে সরকারদলীয় সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে খাওয়ার জন্য পাঁঠা নিতে এসেছিল। এ সময় সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করতে বললে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভাগীয় উপপরিচালককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় আমি এর প্রতিবাদ করলে দলবল ডেকে এনে আমাকে মারধর করে লাঞ্ছিত করে। আমার চোখ ও মুখমণ্ডল এখনো ফুলে রয়েছে।’ তিনি বলেন, দুপুরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরেছি।’ এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকারের উসকানিতেই তাঁর সামনেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন। এ সময় আমরা বাধা দিতে গেলে হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সিলেট শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি এবং হাতাহাতির বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়া হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে কনক পালের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ফোন দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর রঞ্জিত সরকারের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।