মুঠোফোন কেনার জন্য অপহরণের পর শিশুকে গলা কেটে হত্যা, আদালতে জবানবন্দি

মুঠোফোন কিনতে ২০ হাজার টাকার দরকার ছিল এক কিশোরের। মুক্তিপণ হিসেবে ওই টাকা আদায়ের জন্য প্রতিবেশী এক শিশুকে অপহরণ করে সে। কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সে ওই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করে। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই কিশোর সোমবার বিকেলে পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলে।

নিহত শিশুর নাম মোবাশ্বের হোসেন (৫)। সে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের নায়েকপাড়া এলাকার মো. আলম হোসেনের ছেলে। গত রোববার সকালে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের সব্দিগঞ্জ এলাকার একটি বেতবাগান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার রাতে শিশুর লাশটি তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

সোমবার সন্ধ্যায় দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহাআলম প্রথম আলোকে ওই কিশোরের আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই কিশোরের বয়স ১৬ বছর। এ কারণে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতে দেওয়া ওই কিশোরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহাআলম বলেন, ওই কিশোর ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করার জন্য গত শুক্রবার মোবাশ্বের হোসেনকে অপহরণ করে। শিশুটিকে সে প্রথমে বাইসাইকেলে বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটি বেতবাগানে নিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিপণ আদায়ের কথা ভেবেছিল। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পর শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে সে তাকে গলা টিপে অজ্ঞান করে ফেলে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওই কিশোর। কিন্তু শিশুটি বেঁচে থাকলে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সে একটি ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে। পরে ওই কিশোর বাড়িতে ফিরে আসে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, গত শুক্রবার বেলা ১১টার পর থেকে মোবাশ্বের হোসেনকে খুঁজে পাচ্ছিল না তার পরিবারের লোকজন। পরে তাঁরা তাকে খুঁজে পেতে এলাকায় মাইকিং করে। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন নারী শিশুটিকে প্রতিবেশী ওই কিশোরের বাইসাইকেলে করে পাশের তিস্তা সেতু এলাকায় যেতে দেখেছে বলে তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। শনিবার সকালে শিশুটির পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেবীগঞ্জ থানা–পুলিশকে বিষয়টি জানান। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই কিশোরে বাড়িতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তার কথায় অসংলগ্নতা পেলে তাঁরা তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাতে মোবাশ্বেরের বাবা ওই কিশোরের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন। রাতে ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে পুলিশের কাছে ওই শিশুটিকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে। রোববার সকালে তার (ওই কিশোর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের সব্দিগঞ্জ এলাকার বন বিভাগের একটি বেত–বাগান থেকে ডোমার থানা পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটির লাশ উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ থানার পুলিশ। এ সময় ওই কিশোরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বেত–বাগানের আরেকটি স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো দা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোবাশ্বেরের লাশ উদ্ধারের পর রোববার তার বাবা আলম হোসেন বাদী হয়ে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।