নওগাঁয় বোরোর ভালো ফলন ও দামে খুশি কৃষক

ধান কাটতে ব্যস্ত নওগাঁর কৃষকেরা।সম্প্রতি সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী বিলের কাঠখৈর এলাকা থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
ধান কাটতে ব্যস্ত নওগাঁর কৃষকেরা।সম্প্রতি সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী বিলের কাঠখৈর এলাকা থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

নওগাঁ জেলায় এবার পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হওয়ায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুম শুরু থেকেই ধানের দামও বেশি পাচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষিবিদেরা বলছেন, এবার জেলায় ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, ইতিমধ্যে জেলার ১১ উপজেলায় পুরোদমে শুরু হয়েছে কাটা ও মাড়াই। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে নতুন ধান তোলার উৎসব।

শুরুর দিকে স্থানীয় কৃষকেরা করোনা পরিস্থিতিতে কৃষিশ্রমিকের সংকটের কারণে কাটা ও মাড়াই ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে বাইরের জেলা থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রচুরসংখ্যক কৃষিশ্রমিক আসায় কাটা ও মাড়াইয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে মাঠের সব ধান কৃষকের ঘরে উঠবে বলে ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৫ দশমিক ৬৪ মেট্রিক টন ধান এবং ৪ দশমিক ৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই হিসাবে জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১০ লাখ ২৯ হাজার ১৮ মেট্রিক টন ধান ও ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রায় ৬৫ হাজার কৃষিশ্রমিক ছাড়াও সরকারি উদ্যোগে ২২ হাজার শ্রমিক বাইরের জেলা থেকে নওগাঁয় ধান কাটতে এসেছেন।

সম্প্রতি সদর উপজেলা হাসাইগাড়ী, দিঘলী, গুমারদহ বিলের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ কাঁধে ধানের আঁটি নিয়ে খেতের আইল ধরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

কয়েক দিন আগে হাসাইগাড়ী বিলের কাঠখৈর অংশে ধানখেতে কয়েকজন শ্রমিক ধান কাটছিলেন। শ্রমিকদের ধান কাটার কাজ তদারক করছিলেন কাঠখৈর গ্রামের কৃষক আনসার আলী। বিলের ২৮ বিঘা জমিতে এবার তিনি ধান লাগিয়েছেন। আনসার আলী বলেন, 'এবার ধান ভালোই হইছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ করে ধানের ফলন হয়েছে। এলাকাত এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে প্রচুর ধান কাটার কামলা (শ্রমিক) আইছে। গত বছরের মতো এবার কামলা নিয়ে টানাটানি নাই। কামলা সংকট না থাকলেও আকাশের ভাবগতিক দেখে ভালো লাগতেছে না। প্রায় প্রতিদিন একটু করে ঝড়-বৃষ্টি হছে। আর দুই-তিন সপ্তাহ কোনোরকম আকাশ ভালো থাকলেই বিলের সব ধান উঠে যাবে।'

কৃষকেরা জানান, এ জেলার মানুষের প্রধান ফসল ধান। এই ধানের ওপরেই তাঁদের সব নির্ভর করে। সংসারের খরচ, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়—সবই ধান বিক্রির টাকা দিয়ে করা হয়। এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ করে ধানের ফলন হচ্ছে। গত বছর ধানের ফলন ছিল ১৮ থেকে ২০ মণ করে। ধানের দামও গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এবার বেশি।

নওগাঁর হাটবাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে জিরাশাইল ও বিআর-২৮ জাতের ভেজা ধান উঠতে শুরু করেছে। জিরাশাইল ধান প্রতি মণ ৯০০ টাকায় এবং বিআর-২৮ ধান ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ জিরাশাইল ধানের দাম ছিল ৬২০ থেকে ৬৩০ এবং বিআর-২৮ জাতের ধানের দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ধানের উৎপাদন হয়েছিল ৫ দশমিক ২ মেট্রিক টন। এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৫ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। তবে ধানের ফলন দেখে মনে হচ্ছে, এই লক্ষ্যমাত্রাও এবার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমান করোনো পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাঠের ধান কাটা নিয়ে প্রথমে শঙ্কা দেখা দিলেও এখন সেই শঙ্কা কেটে গেছে। বাইরের জেলা থেকে এখন পর্যন্ত এ জেলায় ধান কাটতে প্রায় ২২ হাজার কৃষিশ্রমিক এসেছেন। এঁদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে মে মাসের শেষ সপ্তাহে নওগাঁর শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে যাবে।'