পুলিশ ও আনসারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছেই

পুলিশ ও আনসারে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারা দেশে আরও ৪৮ জন পুলিশ সদস্য ও ৯ আনসার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। আজ বুধবার পর্যন্ত এ নিয়ে পুলিশে বাহিনীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯২৬ জন এবং আনসারে ১৭০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৯০৭ জন সদস্য রয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আজ পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২৬ জন। এর আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৮ জন। আজ পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ৯৬১ জন পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গ নিরোধ) ছিলেন। এর আগের দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ৪ হাজার ৮০৩ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৯ জন আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) আছেন। আজ পর্যন্ত ৩২১ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যে সাতজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, তাঁরা সবাই ডিএমপির।

ডিএমপির গুলশান বিভাগেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজ প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই গুলশান বিভাগের পুলিশ করোনায় আক্রান্তদের হাসপাতালে পাঠানো, তাঁদের আবাসিক এলাকা লকডাউন, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্তদের লাশ সৎকার ও দাফন নিশ্চিত করছে। এসব করতে গিয়ে গুলশান বিভাগের ৩২ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। অনেকেই কোয়ারেন্টিনে আছেন। গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের নানা ধরনের ফলসহ পুষ্টিকর খাবার পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‍্যাব) করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত র‍্যাব সদস্যদের অবস্থা গুরুতর নয়। ভবিষ্যতে আর যাতে কেউ আক্রান্ত না হয়, সে বিষয়ে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নির্দেশে পুলিশের বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। ওই দল হাসপাতালে আক্রান্তদের খোঁজ নিচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণ করছে।

এ ছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশের বিশেষ শাখাসহ (এসবি) বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আক্রান্ত ১৭০ আনসারের মধ্যে বাহিনীর একজন উপমহাপরিচালক, একজন নার্সিং সহকারী, ৭১ জন ব্যাটালিয়ন আনসার, ৯৪ জন অঙ্গীভূত আনসার, একজন নারী আনসার ও তিনজন কর্মচারী রয়েছেন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারি সাজেদা মেডিকেল ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আনসার সদর দপ্তর, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন।

গত সোমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনসার বাহিনীর একজন প্লাটুন কমান্ডার মারা যান। তিনি রাজধানীর ভাটারা থানায় কর্মরত ছিলেন।

আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের উপপরিচালক (গণমাধ্যম) মেহেনাজ তাবাসসুম আজ প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত আনসার ব্যাটালিয়নের সাত সদস্য জাতীয় সংসদ ভবনে কর্মরত ছিলেন। এখন ৪৩৫ আনসার সদস্য প্রাতিষ্ঠানিক, ভাড়া করা আবাসিক হোটেলে ও একজন নিজ কোয়ারেন্টিনে আছেন। গতকাল পর্যন্ত ১১ জন আনসার সদস্য সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।

আজ ফায়ার সার্ভিসে আরও সাতজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসে আক্রান্তের সংখ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে।


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সুত্র জানায়, তাদের একজনকে হোম কোয়ারেন্টিন ও বাকি ১৫ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন সদরঘাট ফায়ার স্টেশন, দুজন পোস্তাগোলা ফায়ার স্টেশন, একজন সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন , পাঁচজন ফুলবাড়িয়া সদর দপ্তর ও একজন ঢাকা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের। 

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অভিযান) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আক্রান্ত ফায়ার কর্মীদের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। করোনার সংক্রমণ এড়াতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছেন। জনসাধারণ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্মীরা অগ্নিনিরোধক পোশাক পরে বের হন। তবে স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় এবং ফিরে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন।