হাসপাতালে করোনা রোগীর কাছে ওষুধ-পথ্য নিয়ে যেতে রোবট বানাল ওয়ালটন

হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা এবং ওষুধ ও পথ্য নিয়ে স্বশরীরে যাওয়া এড়াতে যান্ত্রিক সমাধান নিয়ে এসেছে দেশের ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।

প্রতিষ্ঠানটি একটি যন্ত্র তৈরি করেছে, যা দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসক ও রোগী কথা বলতে পারবেন। রোগীর ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে যন্ত্রটি ওষুধ-পথ্য পৌঁছে দেবে। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে।

ওয়ালটন যন্ত্রটির নাম দিয়েছে মেডিকার্ট রোবট। তারা আশা করছে, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে যন্ত্রটি বড় ভূমিকা রাখবে। চিকিৎসক তার কক্ষে বা অন্য কোথাও বসে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা রিমোটের মাধ্যমে এ রোবট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এতে বিশেষ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও স্পিকার সংযুক্ত করা আছে।

এই রোবটের পাশাপাশি অতিবেগুণি রশ্মিভিত্তিক (আলট্রা ভায়োলেট বা ইউভি) দূর নিয়ন্ত্রিত জীবাণুনাশক ব্যবস্থা বা সিস্টেম তৈরি করেছে ওয়ালটন। তারা এর নাম দিয়েছে রিমোট কন্ট্রোলড ইউভি-সি সিস্টেম। ওয়ালটন জানিয়েছে, হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই), মাস্ক ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করতে এটি ব্যবহার করা যাবে।

ওয়ালটন আগামীকাল বৃহস্পতিবার মেডিকার্ট রোবট ও রিমোট কন্ট্রোলড ইউভি-সি সিস্টেম তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগকে পরীক্ষা বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য হস্তান্তর করবে। ওয়ালটনের দাবি, এই পরীক্ষা হলো পণ্যটির কার্যকারিতা প্রমাণের শেষ ধাপ। এর আগে তারা হাতপাতালে পরীক্ষা করেছে।

ওয়ালটনের তৈরি মেডিকার্ট রোবটের মডেল 'ডব্লিউআরএমসি-৪০০ এপি-২০২০'। নিজেদের গবেষণা ও পণ্য উন্নয়ন বিভাগের (আরঅ্যান্ডডি) কর্মীরা এটির নকশা করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির আরঅ্যান্ডডি বিভাগের প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, রোবটটি একটি ট্রলির আকৃতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চাইলে অন্য আকৃতির রোবটও তৈরি করা যাবে। এটি খাবার, ওষুধ ও পথ্য নিয়ে রোগীর বিছানার কাছে চলে যেতে পারবে। ফলে মানুষকে রোগীর কাছে যেতে হবে না। রোবটটি ৪০০ মিটার ব্যাসের এলাকায় বিচরণ করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ডে এই রোবট সেবা দিতে পারবে। তবে এটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারবে না।

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চালিত রোবটটি একবার পূর্ণ চার্জে ৬ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে বলে জানায় ওয়ালটন। তারা বলছে, চিকিৎসাক্ষেত্র ছাড়াও এই রোবট অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জন সমাগমের স্থানে ব্যবহার করা যাবে।
ওয়ালটনের তৈরি জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি সিস্টেমের একটি হলো ইউভি (আল্ট্রা ভায়োলেট) ট্রলি। যার মডেল ডব্লিউইউভি-টি১৫০। এটি ২৫৩ দশমিক ৭ ন্যানোমিটার রশ্মির জীবাণুনাশক, যা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিত এ ইউভি ট্রলি হাসপাতাল, বাসাবাড়ি ও অফিসে ব্যবহার করা যাবে।

ওয়ালটনের আরঅ্যান্ডডি বিভাগের প্রকৌশলী আলিম হাসান ফেরদৌস আরও বলেন, ইউভি লাইট সরাসরি ব্যবহার মানবদেহ ও চোখের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু ওয়ালটনের তৈরি এ ইউভি ট্রলিতে মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
ওয়ালটন আরও তৈরি করেছে জীবাণুনাশক রিমোর্ট কন্ট্রোল ইউভি-সি থার্মাল জার্মিসাইডাল চেম্বার। যার মডেল 'ডব্লিউ ইউভি-টি২৬০এল'। এটি দুইভাবে জীবাণু ধ্বংস করে। ইউভি রশ্মি ও তাপের মাধ্যমে। এতে রিসাইডুয়াল হিটার ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এটি ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত আর্দ্রতামুক্ত তাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে স্বয়ংক্রিভাবে তাপ ও সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতেও মানবদেহের জন্য আধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর বিশেষ সেন্সর মানুষ কিংবা প্রাণীর উপস্থিতি পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এই ইউভি-সি থার্মাল চেম্বার দিয়ে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, বাসনপত্র, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা যাবে বলে জানায় ওয়ালটন।

ওয়ালটনের ইলেট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, 'বিভিন্ন দেশে এ ধরনের রোবট ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা তৈরি করে সরকারের কাছে দিচ্ছি। সরকার পরীক্ষা করে আমাদের যা বলবে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।