রাজশাহী ও বগুড়ায় ভার্চ্যুয়াল আদালত বর্জনের ঘোষণা বার সমিতির

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজশাহী ও বগুড়ায় ভার্চ্যুয়াল আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা বার সমিতি। আইনজীবীরা প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে এ ঘোষণার আগেই রাজশাহীতে দুজন আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভার্চ্যুয়াল আদালতে বুধবার দুই আসামির জামিন হয়েছে।

রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে বুধবার এক বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল আদালতে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সম্পর্কে রাজশাহী বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেখানে (ভার্চুয়াল কোর্ট) অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, এই পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নেই। এখানে স্ক্যানার মেশিন নেই। এটি হুট করে করে দিয়েছে। আমরা আইনের বিপক্ষে নই। আমরা ভার্চ্যুয়াল কোর্টের বিপক্ষেও নই। কিন্তু এই মুহূর্তে এটি করতে পারছি না।’

ভার্চ্যুয়াল আদালতের মাধ্যমে বুধবার দুজন আসামি জামিন পেয়েছেন। সিএমএম আদালতের ভার্চ্যুয়াল কোর্ট-১–এ ই-মেইলের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন তাঁদের নিযুক্ত আইনজীবী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন শুনানির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট-১–এর বিচারক ও ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ সাইপাড়া গ্রামের মহসীন এবং তানোর থানার দেউলা গ্রামের ইউসুফ আলী। অনলাইনের মাধ্যমে আসামিদের পক্ষে জামিননামা দাখিল করেন অ্যাডভোকেট মনির হোসেন ও শরিফুল ইসলাম।

বগুড়ায় অ্যাডভোকেটস বার সমিতির (জেলা আইনজীবী সমিতি) বুধবারের জরুরি বৈঠকে বারের বর্তমান কমিটির নেতারা ছাড়াও সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বৃহস্পতিবার ধার্য থাকা ১০ মামলার ভার্চ্যুয়াল আদালতে জামিন শুনানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বগুড়ার আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার কার্যক্রম বুধবার শুরু হয়। প্রথম দিনে ১০টি মামলার জামিন শুনানির জন্য অনলাইনে আবেদন জমা পড়ে।

জ্যেষ্ঠ ছয়জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম নিয়ে আইনজীবীদের একটি অংশ উৎসাহী হলেও বগুড়া জেলা বার সমিতি বুধবার দুপুরে আদালতের গহর আলী ভবনে জরুরি বৈঠক ডাকে। বার সমিতির নেতারা ছাড়াও সেখানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও বগুড়া বারের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রেজাউল করিম, সাবেক সভাপতি আবদুল মতিনসহ সরকারসমর্থিত আইনজীবীদের একটি অংশ ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির কার্যক্রম বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। বৈঠক শেষে বিকেলে ভার্চ্যুয়াল আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বগুড়া জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা সম্পর্কে সিংহভাগ আইনজীবীর ধারণা নেই। এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণও নেই। কারিগরি সমস্যাও রয়েছে। অধিকাংশ আইনজীবী এখনো স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। তাঁদের কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও স্ক্যানার মেশিন নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়াও ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়া হুট করে এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে সর্বসম্মতিক্রমে আদালতের কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল লতিফ পশারী বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল আদালতে জামিন শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বার সমিতির ভার্চ্যুয়াল আদালত বর্জনের সিদ্ধান্তের কারণে পরে আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে।’

বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের কৌঁসুলি নরেশ মুখার্জি প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। সব পেশার মানুষই এখন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অভিজ্ঞ। অথচ আইনের মতো একটি শিক্ষিত পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই অজুহাত তুলে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা হচ্ছে। বিরোধিতাকারীদের বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগ-সমর্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এটা দুঃখজনক। করোনার সংকটের সময় হাজতিদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করেই সরকার সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ভার্চ্যুয়াল আদালতে জামিন শুনানির এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা সাময়িক। সরকারের একটা মহৎ উদ্দেশ্য এভাবে ভন্ডুল করার চেষ্টা অপ্রত্যাশিত।

১০ মে বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদালতে শারীরিক উপস্থিতি রোধ ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেন।