৫০ লাখের তালিকায় প্রশ্নের ঊর্ধ্বে সাড়ে ৭ লাখ নাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

করোনাভাইরাসের কারণে বিপদে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ টাকা দেওয়ার জন্য যে তালিকা করা হয়েছিল, তাতে প্রথম দফায় টিকেছে সাড়ে সাত লাখ হতদরিদ্রের নাম। এ ছাড়া অর্ধকোটি নামের তালিকা থেকে নানা অসংগতি থাকায় শুরুতেই ১০ লাখ নাম বাদ পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ওই সূত্রটি বলছে, উপকারভোগীর নামের সঙ্গে থাকা মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করে টাকা ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু মাঠপর্যায় থেকে ত্রুটিপূর্ণ তালিকা আসায় তা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। তা ছাড়া কাজটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যেমে। তাই তিন ধরনের তথ্যের মিল না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে এই টাকা ছাড় করা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রথম আলোকে বলেন, কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর থেকে মনে হবে যে তালিকা পাঠালেই তা অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে। আসলে বিষয়টি মোটেও তা নয়। সচিব জানান, বিশেষভাবে তৈরি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই তালিকা যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। তাঁর মতে, ত্রুটিপূর্ণ নাম সফটওয়্যারে চিহ্নিত হবে এবং এগুলো ধরা পড়ায় ঢালাওভাবে টাকা দেওয়া হচ্ছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, অনিয়ম-অসংগতি থাকায় তালিকাটি সংশোধন করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, খুব দ্রুত তালিকাটি সংশোধন করে ঈদের আগেই উপকারভোগী সবার হাতে এই টাকা তুলে দেওয়া হবে। যাদের মোবাইল নম্বর নেই, তাঁরা ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে সেই হিসাব নম্বরে টাকা পাবেন।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দৈনিক দুই ডলারের নিচে আয় করেন—দেশে এমন লোক আছেন ১৫ শতাংশের মতো, সংখ্যায় যা আড়াই কোটির কাছাকাছি। সরকার প্রতি পরিবারের সদস্য চারজন ধরে এখানে দুই কোটি মানুষকে বিবেচনায় রেখেছে। এই ৫০ লাখ পরিবারের বাইরে আরও ৭৬ লাখ পরিবারের প্রায় তিন কোটি সদস্য আগে থেকেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, দুস্থদের জন্য খাদ্য সহায়তাসহ (ভিজিএফ) বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা পাচ্ছেন। এ ছাড়া রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা।

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, অনিয়ম ঠেকাতে ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে এই সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের টাকা ছাড় করা যাচ্ছে না। যে ব্যবস্থায় টাকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে একজনের জন্য কেবল একটি মোবাইল নম্বরই ব্যবহার করার সুযোগ আছে। যাঁদের মোবাইল নেই, তাঁদের অনেকের নামের পাশে যাঁরা তালিকাটি করেছেন, তাঁদের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাঁদের মোবাইল নম্বর নেই, তাঁদের ব্যাংক হিসাব খুলে তাতে এই টাকা দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনকে তালিকা সংশোধন করে দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে বিপদে পড়া ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণের পাশাপাশি প্রত্যেককে সরকারের পক্ষ থেকে আড়াই হাজার করে নগদ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই খাতে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই কার্যক্রম দেখভালও করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকা করে। মাঠ প্রশাসন মূলত স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকাটি করেছে। এটি করতে গিয়ে দেখা যায় হবিগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় একই মোবাইল নম্বর একাধিক উপকারভোগীর নামে ব্যবহার করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগেরহাটের একজন ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, হতদরিদ্র সবার তো আর মোবাইল নম্বর নেই। এ জন্য জনপ্রতিনিধিদের নম্বর দেওয়া হয়েছে।

যদিও মুখ্য সচিব আহমেদ কাউকাউস বলেছেন, ‘আমরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি জি টু বি অর্থাৎ গভর্নমেন্ট টু বেনিফিশিয়ারি বা সরকার থেকে সুবিধাভোগী। এর মাঝখানে কেউ ঢুকতে পারবে না। সরকারের কাছ থেকে সুবিধাভোগীর মোবাইল ফোনে টাকাটা চলে যাবে। এই টাকা তুলতে যে খরচ, তা মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সরকার পরিশোধ করবে।

মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবা ব্যবহার করে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৪ মে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। ছবি: ফোকাস বাংলা
মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবা ব্যবহার করে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৪ মে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। ছবি: ফোকাস বাংলা

কতসংখ্যক উপকারভোগীর ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও একই মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল।

মুখ্যসচিব বলেন, ‘আমরা প্রথমে স্বচ্ছ তালিকা পেয়েছি সাড়ে সাত লাখ। এরপর বাকি সুবিধাভোগী চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। একটি বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রে মিল থাকতেই হবে।’