করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে, খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সংক্রমণের দশম সপ্তাহ থেকে সংখ্যার পাশাপাশি পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হারও ঊর্ধ্বমুখী। দ্রুত বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। একাদশ সপ্তাহের প্রথম দুই দিনের পরিসংখ্যান সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা জাগাচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু​র নতুন রেকর্ড হয়েছে। নতুন পরীক্ষাও হয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক। এই সময়ে ৯ হাজার ৭৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৬০২ জনের দেহে সংক্রমণ বা কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছেন ২১ জন।

আট বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শক দল এর আগে সরকারকে একটি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিলেন, ১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণের পর্যায় (পিক) শুরু হবে। চলবে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত। ঈদের পর সংক্রমণ কোনো দিন বাড়বে আবার কোনো দিন কমবে। তবে প্রবণতা থাকবে কমার দিকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই পূর্বাভাসের কিছু মিল পাওয়া যাচ্ছে। গত দুই দিনের প্রবণতা সেদিকে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধে শিথিলতার কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘পিকে’ আছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সামনের দুয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে ঈদের পর সংক্রমণ কমার প্রবণতা ধারা শুরু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এর আগে বলেছিলেন মে মাসের শেষের দিক থেকে দেশে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। সেটা বলেছিলেন লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে বলা মুশকিল সংক্রমণ কখন গিয়ে কমতে শুরু করবে বা আরও কত বাড়বে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বাস্তবতা বিবেচনায় সরকার কিছু বিষয় শিথিল করেছে। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে মানুষ যেভাবে সবখানে ভিড় জমাচ্ছে, চলাচল করছে; তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গত রোববার থেকে দেশে সংক্রমণের একাদশ সপ্তাহ চলছে। এর আগে সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যান চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা কার্যত সারা দেশে লকডাউন (অবরুদ্ধ) পরিস্থিতি তৈরি করে। এরপর ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকে লকডাউন পরিস্থিতিও শিথিল হয়ে পড়ে। এর ঠিক দুই সপ্তাহ (ইনকিবিউশন পিরিয়ডও দুই সপ্তাহ) পর সংক্রমণের দশম সপ্তাহ, অর্থাৎ​ ১০ মে থেকে সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে।

>

আক্রান্তের সংখ্যা, হার ও মৃত্যু—সবই দ্রুত বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি ছিল দশম সপ্তাহে। চলতি সপ্তাহে আরও বাড়ার ইঙ্গিত।

শুরুতে দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা সীমিত ছিল। এখন ৪২টি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা বাড়ানোর পর থেকে রোগী শনাক্তও বাড়তে থাকে। তবে ৯ দিন ধরে শনাক্তের হার আগের চেয়ে বাড়ছে। শুরুর দিকে দৈনন্দিন পরীক্ষার ৮ থেকে ১৩-১৪ শতাংশ নমুনা পজিটিভ বা করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নবম সপ্তাহে (৩–৯ মে) ১০ দশমিক ৯৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ (একদিন) নমুনা পজিটিভ ছিল। দশম সপ্তাহে (১০-১৬ মে) এক দিন ছাড়া বাকি ছয় দিনই ১৪ শতাংশের বেশি নমুনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এখন একাদশ সপ্তাহে এসে সেটি আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৬৮ ও দ্বিতীয় দিন গতকাল ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ নমুনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।

দেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এক সপ্তাহ বাদে প্রতি সপ্তাহেই আগের সপ্তাহের চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সপ্তম সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৮৫৪ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১ হাজার ১৯২ জন বেশি। অষ্টম সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯৩৮ জন এবং নবম সপ্তাহে গিয়ে অষ্টম সপ্তাহের চেয়ে ১ হাজার ১৮৮ জন বেশি শনাক্ত হয়েছিলেন। নবম সপ্তাহে শনাক্ত হন ৪ হাজার ৯৮০ জন। আর দশম সপ্তাহে হন ৭ হাজার ২২৫ জন। একাদশ সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৭৫ জন।

একইভাবে সংক্রমণের দশম সপ্তাহ থেকে মৃত্যুও বাড়ছে। দশম সপ্তাহে মারা গেছেন ১০০ জন। এর আগে এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫৬ জন মারা যাওয়ার রেকর্ড ছিল, সেটি হয়েছিল সপ্তম সপ্তাহে। আর চলতি একাদশ সপ্তাহের দুই দিনেই মারা গেছেন ৩৫ জন।

সর্বোচ্চ পরীক্ষা, শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড

গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৭৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ২৩ হাজার ৮৭০। আর মোট মৃত্যু হলো ৩৪৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১২ জনসহ মোট ৪ হাজার ৫৮৫ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে এসব হালনাগাদ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।

এর আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৭৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ১৪ জন। পরীক্ষা হয়েছিল ৮ হাজার ৫৮২টি।

গত দুই দিনের চিত্র পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা জাগাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোকসমাগম বাড়তে দেখা গেছে।

ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহবলেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর মূল অস্ত্র সচেতনতা। সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন হতে হবে। মানুষ বিধিনিষেধ না মানলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করতে হবে।