তরমুজে হেসেছেন দাকোপের কৃষক

খুলনায় এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। ১৩ মে দাকোপের পশ্চিম বাজুয়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
খুলনায় এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। ১৩ মে দাকোপের পশ্চিম বাজুয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

খুলনার দাকোপ উপজেলার বচা গ্রামের বিস্ততৃ মাঠজুড়ে তরমুজ আর তরমুজ। খেত থেকে সেগুলো জড়ো করে স্তূপ করছিলেন কৃষক সুরেশ মণ্ডল। তিনি জানালেন, এই করোনাকালেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা খেতে গিয়েই তরমুজ কিনছেন। দামও গতবারের চেয়ে বেশি।

উপকূলীয় দাকোপের গ্রামগুলোতে এবার তরমুজে হেসেছে কৃষক। ভালো ফলন, দামও ভালো। চাষিদের পাশাপাশি তরমুজখেতে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করা স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষও প্রতিদিন ভালো রোজগার পেয়ে খুশি।

১২ ও ১৩ মে দাকোপের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে ঘুরছেন তরমুজের ফড়িয়া ও আড়তদারেরা। করোনাকালে লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রলার নিয়ে তরমুজ কিনতে এসেছেন তাঁরা। তরমুজচাষিদের কথা বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ব্যাপারীদের প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে।

পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের তরুণ চাষি অভিজিৎ জোয়ার্দ্দার এবার ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ৯ বিঘা জমির তরমুজ ছয় লাখ টাকায় বেচেছেন। তিনি বলেন, দাম না থাকায় প্রতিবছরই আমনে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক। তাই এখন তরমুজই এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে। চাষিরা জানান, আমনে প্রতিবছর ক্ষতি হচ্ছে। তরমুজে সবাই সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছেন। পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের চাষি দেবাশিস মণ্ডল বলেন, সাড়ে আট লাখ টাকায় ১২ বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি করেছেন। সবমিলিয়ে খরচ দুই লাখের মতো। এবার যাঁরা একটু কম দাম পেয়েছেন, তাঁরাও এক টাকা বিনিয়োগ করে চার টাকা পেয়েছেন। এর চেয়ে আর কি ভালো হতে পারে।

 স্থানীয় চাষিরা বলছেন, এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তরমুজ বেশ আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। গত বছর বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের প্রচুর খেত নষ্ট হয়েছিল। দামও ওঠেনি। গত বছর এক বিঘার তরমুজখেত বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। এ বছর তরমুজভেদে এক বিঘার খেত বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গড়পড়তা ৬০ হাজারে খেতগুলো কিনেছেন ব্যাপারীরা।

তরমুজের ব্যাপারী বরিশালের আনিস হাওলাদার বলেন, দাকোপের তরমুজ খুব মিষ্টি, বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। তরমুজ ভালো হয়েছে। তাই চাষিরা দামও পাচ্ছেন ভালোই। তবে এবার করোনার কারণে আসতে খুব সমস্যা পোহাতে হয়েছে।

 স্থানীয় মৌসুমি শ্রমিক মিলন রায় জানান, তাঁদের দলে ১৫ জন কাজ করেন। তরমুজ গাছ থেকে কেটে তা ট্রাকে ভরাই তাঁদের কাজ। প্রতিদিন প্রত্যেকের হাজার টাকার ওপর আয় হচ্ছে।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ ও ফলন—দুটিই বেড়েছে। উৎপাদিত এই তরমুজের বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।