বরিশালে আম্পানের প্রভাবে অসহনীয় তাপদাহ

ঘোষণা আসা মাত্রই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সতর্কবার্তা প্রচার করছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে বরিশাল নগরের লঞ্চঘাট এলাকায়। ছবি: সাইয়ান
ঘোষণা আসা মাত্রই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সতর্কবার্তা প্রচার করছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে বরিশাল নগরের লঞ্চঘাট এলাকায়। ছবি: সাইয়ান

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে অসহনীয় তাপদাহ শুরু হয়েছে। দুপুরে বরিশালে সামান্য বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রার হেরফের হয়নি। তবে বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে বৃষ্টি হয়নি।

একইসঙ্গে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। মাইকে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচার চলছে। মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে। বেশকিছূ ঝূঁকিপূর্ণ ও দুর্গম এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদে আনা হচ্ছে। মাছ ধরার ট্রলারগুলোও নিরাপদে ফিরে আসতে শুরু করেছে।


বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও ঘণীভূত হয়ে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঝড়টির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে এটি শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। চলতি শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটিই প্রথম সুপার সাইক্লোন বা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়। এর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূলে। কিন্তু শক্তির দিক থেকে আম্পান সিডরের চেয়েও অধিক শক্তিশালী। সিডরে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৪০ কিলোমিটার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ২২৫ থেকে ২৪৫ পর্যন্ত দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়ার আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান গতি-প্রকৃতি বজায় থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার রাতের শেষ ভাগ থেকে আগামীকাল বুধবার বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে অতিক্রমের সম্ভাবনা প্রবল। তবে ঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানার আগে বাতাসের গতিবেগের শক্তি ক্ষয়ে কমে যাবে। উপকূলে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার লোকের বাস। সেখানে একটি মাত্র আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে ১৪০-১৫০ জন লোক আশ্রয় নিতে পারে। বাকিরা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় পাশের কেওড়া বনে গাছের ওপরে আশ্রয় নেন। আম্পানের সতর্ক সংকেত জারির পর আজ সকাল থেকে এই এলাকার লোকজন সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের ট্রলারে করে চরফ্যাশনে নিরাপদে পাঠাচ্ছি। কিন্তু সাগর উত্তাল হওয়ায় এই উদ্ধার অভিযান খুবই বিপদসংকুল। জানি না কত লোককে নিরাপদে নেওয়া যাবে। কারণ সাগর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে।'
বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বরগুনা জেলার তালতলী, পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন চর এলাকায় লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। তাঁদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। মাইকে সোমবার বিকেল থেকেই উপজেলা প্রশাসন ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘুরে ঘুরে প্রত্যন্ত এলাকায় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

তালতলী জয়ালভাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা ও মাছ ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মাইকে প্রচার চলছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবে সবার মধ্যে আতঙ্ক আছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন থেকে ট্রলারে করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন থেকে ট্রলারে করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

একইভাবে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী উপজেলায়ও চলছে ঝড়ের সংকেত প্রচার এবং জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আহ্বান। তবে এখনো কোনো এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুর, জাঙ্গালিয়া, গোবিন্দপুর এই তিনটি ইউনিয়ন মেঘনা নদীর তীরে হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, 'আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা আছে। সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য এক হাজার ১০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।'