'সিগন্যাল হুনলেই পিলাই কাঁপে'

নদীর তীরে এভাবে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে উপকূলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এসব পরিবার। বলেশ্বর নদ তীরবর্তী চারাখালী গ্রাম, ইন্দুরকানি, পিরোজপুর, ১৯ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
নদীর তীরে এভাবে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে উপকূলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এসব পরিবার। বলেশ্বর নদ তীরবর্তী চারাখালী গ্রাম, ইন্দুরকানি, পিরোজপুর, ১৯ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

বলেশ্বর নদের তীরে পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার চারাখালী গুচ্ছগ্রাম। অতি দরিদ্র ৪০টি পরিবার এখানে বসবাস করছে। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত শুনলে এখানের বাসিন্দাদের চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে। চোখে মুখে দেখা যায় ভয়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আবু হোসেনের (৫৫) সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কথা উঠতেই তিনি বলেন, 'বইন্নার সিগন্যাল হুনলে পিলাই (বুক) কাঁপে'। শুধু আবু হোসেন নন। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের বলেশ্বর নদ, কচা ও পানগুচি নদী তীরের গ্রামগুলোর মানুষ বছরের পর বছর ধরে বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন। তাঁদের সুরক্ষার জন্য যেমন নেই নদীর তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ। নেই ঘূর্ণিঝড় সহিষ্ণু পাকা ঘর।

কথা হয় বলেশ্বর নদের তীরের আরও কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আকাশে সকাল থেকে ছিল কালো মেঘ। দুপুর থেকে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া ও ইন্দুরকানি উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে এ তিন উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৫৬ জন।

মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, হোগলপাতি, সাংরাইল, মাঝের চর, চর ভোলমারা, বড়মাছুয়া, খেজুরবাড়িয়া, ছোটমাছুয়া গ্রাম। ভান্ডারিয়া উপজেলার কচা নদীর তীরবর্তী হরিণপালা, চরখালী, নদমূলা, দারুলহুদা, ভিটাবাড়িয়া গ্রাম। ইন্দুরকানি উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরে চারাখালী, ইন্দুরকানি, ঢেপসাবুনিয়া, চর বলেশ্বর, চন্ডিপুর, সাউদখালীর চর ও পানগুচি নদীর তীরের খোলপটুয়া গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব গ্রামের বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ধরেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলে বাড়ি ঘর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে খেয়া পারের অপেক্ষায় মানুষ। কাউখালী, পিরোজপুর, ২০ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে খেয়া পারের অপেক্ষায় মানুষ। কাউখালী, পিরোজপুর, ২০ মে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের জেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছয় মাস আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বসত বাড়ি–ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনো। বর্তমানে আরেক দুর্যোগ করোনার মহামারি চলছে। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।

ইন্দুরকানি উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহাদুল ইসলাম বলেন, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে হয়ত প্রাণ বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে তাঁদের ঘর–বাড়ি, গাছপালা ও ফসলের যে ক্ষতি হবে, তা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন। উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ আর দুর্গত মানুষের পুনর্বাসনে জন্য বড় ধরনের সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগ দরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়ায় ১৪০ কিলোমিটার ও ইন্দুরকানিতে ৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের কিছু স্থানে ভাঙন রয়েছে। তবে দ্রুত তা মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বড়মাছুয়া বেড়িবাঁধের জন্য কাজ শুরু করা হচ্ছে।