জামিন আবেদন নিষ্পত্তি ২৮৩৪৯, জামিন ১৮৫৮৫ জনের

সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে দেশে বিচার কার্যক্রম চলছে। দেশের বিচার বিভাগ এক নতুন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আজ বুধবার এই কার্যক্রমের অষ্টম দিন।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সারা দেশের অধস্তন আদালত থেকে আজ বুধবার বিভিন্ন মামলায় ৪ হাজার ৪৮৪ জন জামিন পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশের অধস্তন আদালতে ২৮ হাজার ৩৪৯টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়, যেখানে ১৮ হাজার ৫৮৫ জন জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া দেশের উচ্চ আদালতেও ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম চলছে। উচ্চ আদালত থেকে ১১২ জন ইতিমধ্যে জামিন পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভার্চ্যুয়াল কার্যক্রমের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, দেশের ২৫ হাজারের বেশি বিচারপ্রার্থী জনগণ আদালতের দারস্থ হতে পেরেছেন। তাঁদের অনেকেই প্রতিকার পেয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যক্তির আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না এবং সংক্রমণের শঙ্কা থেকে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এমন অবস্থায় আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার–সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হয়। এই অধ্যাদেশের দ্বারা দেশে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা বিচার বিভাগের জন্য মাইলফলক। এর মাধ্যমে দেশের বিচারব্যবস্থা নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে আদালতে সশরীর উপস্থিত না হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করছেন এবং সারা দেশে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। ওই অধ্যাদেশ ভবিষ্যতে, বিশেষ করে ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাদেশ ও ভার্চ্যুয়াল কোর্টের কার্যক্রম শুরু
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আদালতেও সাধারণ ছুটি চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। অধ্যাদেশ জারির পরদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সরকার ঘোষিত ছুটি ও অবকাশকালে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি বেঞ্চ গঠন করে দেন। একই সঙ্গে চেম্বার বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া অধস্তন আদালতে শুধু জামিন–সংক্রান্ত বিষয়সমূহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ গঠন করেন দেন। ১১ মে থেকে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। সেদিন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অধ্যাদেশ কার্যকর হলে বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ভিডিও কনফারেন্সিংসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিচার কার্যক্রম করা সম্ভব হবে।
এর আগে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয় বলে সভা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছিল।

আট কার্যদিবসে ১৮৫৮৫ জনের জামিন
বুধবার ছিল কার্যক্রমের অষ্টম দিন। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সারা দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে ৭ হাজার ৬৩১টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে অধস্তন আদালতে ৪ হাজার ৪৮৪ জন বন্দীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। আট কার্যদিবসে ২৮ হাজার ৩৪৯টি জামিন আবেদনের শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়। সব মিলিয়ে আট কার্যদিবসে অধস্তন আদালত থেকে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে ১৮ হাজার ৫৮৫ জন জামিন পেয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন আদালতে সাধারণ ছুটি চলছে। তবে এই সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে অধস্তন আদালতে শুধু জামিন–সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হচ্ছে। এই সময়ে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য হাইকোর্টের পৃথক চারটি বেঞ্চ এবং আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট রয়েছেন।
হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে, চারটি বেঞ্চের মধ্যে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চে ফৌজদারি বিষয়াদি শুনানি ও নিষ্পত্তির দায়িত্বে রয়েছেন। ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ হতে বিভিন্ন মামলায় ১১২ জন অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।

হাইকোর্টে রাশেদ চিশতীর জামিন স্থগিত
১৫৯ কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক ও অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতীর জামিন ২৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
ওই মামলায় গত মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছিলেন। এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন হাইকোর্টে আবেদন করে। এর ওপর ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত করে আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ ও ১৯ মে পৃথক চারটি মামলায় রাশেদুল হক চিশতী ঢাকার আদালত থেকে জামিন পান। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ থেকে ১৫৯ কোটি টাকা অর্থ পাচারের ওই মামলায় জামিন পান তিনি। এই জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত ২৮ মে পর্যন্ত ওই মামলায় রাশেদুল চিশতীর জামিন স্থগিত করেন। ফলে রাশেদুল চিশতি আপাতত মুক্তি পাচ্ছেন না। ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় ওই মামলাটি করে দুদক।