অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি, বহু গ্রাম প্লাবিত

বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে গ্রামে। আজ বুধবার বিকেলে বরগুনার তালতলী উপজেলার খোট্টারচরে। ছবি: প্রথম আলো
বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে গ্রামে। আজ বুধবার বিকেলে বরগুনার তালতলী উপজেলার খোট্টারচরে। ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বাঁধের ভেতরের ফসলের খেত, বসতঘর পানিতে ডুবে গেছে। বরগুনা সদর, তালতলী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া ভোলার তজুমদ্দিনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি নাজুক বাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।

তালতলীর জয়ালভাঙা এলাকার বাসিন্দা মো. আলম মিয়া রাত সাড়ে ৮টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোগো এলাকা পানিতে তুবান অইয়্যা যাতে লাগছে। জয়ালভাঙা স্লুইসগেট ও হ্যার আশপাশের বাঁধ উপচাইয়্যা পানি ঢুইক্কা গ্রামের পর গ্রাম তলাইয়্যি গ্যাছে। মুই কোনো রহম ঘরের মাচায় উইট্টা রইছি। পরিবারের সব লোক আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠাইয়্যি দিছি।’ কথা বলা শেষ না হতেই মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর তাঁর সংযোগ পাওয়া যায়নি।

তালতলী উপজেলার বড়অংকুজান পাড়া খোট্টারচর, জয়ালভাঙা, নিশানবাড়িয়া, মরা নিদ্রাসহ অনেক গ্রাম এখন প্লাবিত। এসব এলাকার অন্তত ১০ হাজার পরিবারের ঘর পানিতে ডুবে গেছে। রাতের জোয়ারে অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছেন এসব এলাকার মানুষ।

সন্ধ্যায় তালতলী খোট্টারচর এলাকার আরেক বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব জালাল উদ্দীন বলছিলেন, ‘সিডর বড় বইন্না আছিল। কিন্তু সে সময়ও এত পানি দেহি নায়। ৬১ সালের বইন্নায় খুব পানি অইছিল। এবারও হেইরহম পানি চাইর দিন থই থই হরে। ঘর-দুয়ার সব তলাইয়্যা গ্যাছে। বান্দা উপচাইয়্যা পানি ওডে।’

বড়অংকুজান পাড়া গ্রামের পারুল বেগম, হাসিনা, খলিল, মিয়া, জয়নাল আবেদীন, গোলাম কবির, সোহরাব হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। পারুল বেগম বলেন, ‘পানিতে ঘরে তরাতে পারি না। হেইতে পোলাপান লইয়্যি আশ্রয়কেন্দ্রে আইছি। জানি না ঘরদুয়ারের অবস্থা কী, মালামাল কোমনে কি রহম আছে।’

২০১৫ সালের প্রলয়ংকরী ঝড় সিডরের সময় কিছু এলাকায় বাঁধ উপচে পানি ওঠার ঘটনা ঘটেছিল। এরপর এবারই বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটল। বাঁধ উপচে পানি ঢোকার ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা অনেকটা বিস্মিত। তাঁরা বলছেন, পাউবোর বাঁধের উচ্চতা চার মিটার। এত বড় উচ্চতার বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগের।

বুধবার বেলা ১১টা থেকে বরগুনার পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর, কীর্তনখোলা নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ার শুরু হয়। এসব নদীতে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। তীব্র ঘূর্ণি বাতাসে জোয়ারের তীব্রতাও বহুগুণ বেড়ে যায়। বরগুনার এসব নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জোয়ার প্রবাহিত হয়। তবে রাতের জোয়ারের উচ্চতা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা পাউবো ও স্থানীয়দের।

বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে বুধবার বেলা ২টার পর থেকে কীর্তনখোলার পানি বিপৎসীমা (২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার) ছাড়িয়ে যায়। বেলা ৩টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মিটারগেজ রিডিংয়ে কীর্তনখোলা নদীর পানি ২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার এবং বিকেল ৪টায় ২ দশমিক ৫৭ রেকর্ড করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডর বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ে খোলা নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনা, পটুয়াখালী কলাপাড়া, দুমকি, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মাছুয়া এবং ভোলার তজুমদ্দিনের অবস্থা খারাপ। কিছু স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও বাঁধ উপচে অনেক স্থানে পানি ঢুকে পড়ার খবর আসছে। রাতের জোয়ারের উচ্চতা আরও বাড়তে পারে। বাতাসের গতি খুব বেশি থাকায় এই আশঙ্কা করা হচ্ছে।