কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে তিন দিন পর চলছে ফেরি

ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফিরছে মানুষ। শুক্রবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে। ছবি: অজয় কুন্ডু
ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফিরছে মানুষ। শুক্রবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে। ছবি: অজয় কুন্ডু

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে টানা তিন দিন বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচাল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হলেও শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীরা বলছেন, ঈদের আর মাত্র দুই–তিন দিন বাকি। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছেন তাঁরা। করোনার ঝুঁকি জানার পরেও তাঁরা ভিড় ও দুর্ভোগ সামলে বাড়ি ফিরছেন।

শুক্রবার কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর পাঁচটা থেকে রাজধানীর ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাটে আসতে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীরা। এর আগে মধ্যরাত থেকে ফেরিগুলো উভয় ঘাটে টার্মিনালে আটকা পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পারাপার করে। যাত্রীরা ব্যক্তিগত গাড়ি, ভাড়ায় মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকাশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র করে শিমুলিয়া ঘাটে আসছেন। তাঁরা ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে একই ধরনের যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঘাটের টার্মিনালে এসব যানবাহন না দেখা গেলেও ঘাট থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে এসব যানবাহন। সকাল নয়টার পর থেকে যাত্রীদের চাপ কিছুটা বেড়ে গেলেও দুপুর ১২টার দিকে তা কমে আসে। বেলা দেড়টার পরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সব ধরনের যানবাহন শূন্য হয়ে যায়। তবে শিমুলিয়া ঘাট থেকে যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ভিড়ছে ফেরিগুলো।

খুলনাগামী যাত্রী হয়দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় অনেক দিন ঘরবন্দী ছিলাম। এভাবে তো আর থাকা যায় না। গ্রামের বাড়িতে সবাই আছে। তাই করোনার ঝুঁকি নিয়েই ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি।’

করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সচেতন যাত্রীরাও ঢাকা ছেড়েছেন। বরিশালগামী যাত্রী সমির কুমার সেন বলেন, ‘শুক্রবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে আমাদের। তাই বাড়িতে যাচ্ছি। করোনার ঝুঁকি থাকায় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি। সামাজিক দূরত্ব মেনেই যানবাহন ও ফেরিতে উঠেছি। সর্তক হলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।’

বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির গ্রিজার অজয় রায় বলেন, ‘ফেরিতে ওঠা যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির কিছুই মানে না। এর ফলে আমরা যাঁরা ফেরিতে কাজ করি, তাঁরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকি। সম্প্রতি আমাদের কয়েকজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে।’

ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফিরছে মানুষ। শুক্রবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে। ছবি: অজয় কুন্ডু
ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফিরছে মানুষ। শুক্রবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে। ছবি: অজয় কুন্ডু

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি রোধ ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে গত সোমবার বিকেল চারটা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেরি চলাচল। এতে উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। যানবাহনগুলো ঘাটের টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। আর ফেরিগুলো ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্টে নোঙর করে রাখা ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে বিআইডব্লিউটিসির নির্দেশনা শিথিল করা হলে আবারও শুরু হয় ফেরি চলাচল। বর্তমানে এই নৌপথে ১৯টি ফেরির মধ্যে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের ১২টি ফেরি চলাচল করছে।

শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকায় রাত ১১টা থেকে আমরা ফেরি চলাচল শুরু করেছি। দুই ঘাটের টার্মিনাটে আটকা পড়া পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন আমরা ভোররাতের মধ্যে পারাপার করেছি। সকালে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীরা বেশি ভিড় করলেও দুপুর ১২টার পরে তা কমে যায়। এখন ঢাকাগামী যাত্রী বা যানবাহন কোনোটাই নেই। তবে শিমুলিয়া থেকে আসা প্রতিটি ফেরিতে গড়ে শতাধিক যাত্রী কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রবেশ করেছে।’

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) নাসির উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ১১টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তত ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক ফেরিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো পণ্যবাহী ট্রাক আমাদের ঘাটে নেই। শুক্রবার দুপুরের পর ঘাট এখন অনেকটাই ফাঁকা।’